অবশেষে বিদায় নিতে যাচ্ছে ঘটনাবহুল বছর ২০২১ সাল। মহামারির কারণে বহুল আলোচিত ঘটনার জন্য মানুষের কাছে বিদায়ী বছরটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে। বছর জুড়ে ছিল প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের মহামারির খবর। সারা বিশ্বের মতো দেশের মানুষও লকডাউনের বিধি-নিষেধ মধ্যে ছিলো।
ভাইরাস ঠেকাতে অভাবনীয় লকডাউনে জীবনযাত্রা থমকে যাওয়ার এমন দিন আর দেখেনি বাংলাদেশ; সে কারণে বড় একটা সময় ঘরবন্দি করে রাখার কোভিড মহামারীর দ্বিতীয় বছরে স্বাস্থ্য খাতই ছিল আলোচনায়, যার সর্বাগ্রে ছিল ডেল্টা, রেকর্ড সংক্রমণ, মৃত্যুর ভয়াবহতা আর টিকা।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ঠেকাতে দেশে ৫ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত প্রথম লকডাউনে ১৮ দফা বিধিনিষেধ দেয় সরকার। পরে তা দুই দিন বাড়িয়ে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়। সে সময় সরকারি-বেসরকারি অফিস, শিল্পকারখানা, গণপরিবহন চালু ছিল।
এরপর ১৪ এপ্রিল থেকে ‘সর্বাত্মক লকডাউনে’ সব অফিস ও পরিবহন বন্ধের পাশাপাশি বাজার-মার্কেট, হোটেল-রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ হয়। বছরের মাঝামাঝি সময়ে সংক্রমণের তীব্রতায় শনাক্ত ও মৃত্যুর মিছিলের দিনের পর দিন রেকর্ড ভেঙে দেশজুড়ে ভয়াল পরিস্থিতি তৈরি হয়।
জুনের শুরু থেকে এটি দ্রুতই সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে অগাস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত করোনাভাইরাসের ভয়াবহ দাপট দেখে বাংলাদেশ। এ সময় শনাক্ত ও মৃত্যুর সব রেকর্ড ভেঙে যায়।
২৮ জুলাই সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ২৩০ জন আক্রান্ত হয়। ৫ ও ১০ অগাস্ট সর্বোচ্চ ২৬৪ জনের মৃত্যু হয়, যা দেশে এক দিনে মৃত্যুর সর্বোচ্চ রেকর্ড।
কোভিডের লাগামহীন এমন বিস্তার ও গুরুতর অসুস্থতার ভয়াবহতার আগে প্রতিষেধক হিসেবে টিকাদান শুরুর কার্যক্রমে যে আশা জেগেছিল, তা হতাশায় পরিণত হয় ভারত টিকাদান বন্ধ করে দিলে।
তবে মহামারী প্রতিরোধে টিকাদান আবারও গতি পায় সরকারের বিকল্প টিকা সংগ্রহের পদক্ষেপে। দুই মাসের বিরতির রেশ কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত দেশের ১১ কোটি মানুষকে অন্তত এক ডোজ টিকা দেয়া এবং সবাইকে টিকা দিতে মজুদ বাড়ানোর ব্যবস্থাও হয়েছে এ বছরেই।
এছাড়া কয়েক দফায় নজিরবিহীন কঠোর লকডাউন ও নানা বিধিনিষেধের মধ্যে মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করার ইতিবাচক ফলও মিলেছে। হুহু করে বাড়তে থাকা কোভিড সংক্রমণ অবশেষে অগাস্টের শেষ দিক থেকে নিম্নমুখী হতে থাকে।
তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা থাকে উৎপাদনমুখী শিল্প কারখানা। আর লকডাউনের মধ্যে ব্যাংকে লেনদেনের সময় নির্ধারণ করা সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত। এরপর দফায় দফায় বাড়ানো হয় লকডাউনের বিধিনিষেধ।
এতে বিপাকে পড়ে নিম্ন আয়ের মানুষ। পরিবহন, হাট-বাজার-মার্কেট, হোটেল-রেস্তোরাঁসহ বন্ধ হওয়ায় কাজ হারায় অনেকেই। কাজ না থাকায় রাজধানী ছেড়ে অনেক মানুষ চলে যায় গ্রামে।
তবে লকডাউনের শুরু থেকেই এর বিরোধিতা করে ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি জন জীবনে স্বস্তি ফেরাতে রাজনৈতিক সহ নানা মহল থেকে দাবি ওঠে লকডাউন প্রত্যাহারের। এরপর ১১ আগস্ট থেকে কঠোর লকডাউন তুলে নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশনা দেয় সরকার।
গণপরিবহনসহ সমস্ত সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত, শপিংমল, রেস্টুরেন্ট সব খুলে দেয়া হয়। স্বাভাবিক হয় জীবন যাত্রা।