২০২১ সালে মহাকাশ বিজ্ঞান পৌঁছেছে অনন্য উচ্চতায়। প্রথমবারের মতো সূর্যের বায়ুমণ্ডলে নভোযান প্রবেশ করিয়ে ইতিহাস গড়েছেন নাসার বিজ্ঞানীরা। এছাড়াও মহাকাশে পর্যটক নিয়ে বাণিজ্যিক ফ্লাইট থেকে শুরু করে সিনেমার শুটিং সবই হয়েছে এ বছর।
এ বছরের ঐতিহাসিক ঘটনা সূর্যের বায়ুমণ্ডলে নাসার মহাকাশ যানের প্রবেশ। প্রথমবারের মতো এই মাইলফলক স্পর্শ করে পার্কার সোলার প্রোব নামের এই মহাকাশযান। গেল এপ্রিলে সূর্যের জ্যোতির্বলয় ছুঁয়েছে এই যানটি, এছাড়াও গবেষণার জন্য সংগ্রহ করা হয় তথ্য ও নমুনা।
২০১৮ সালে সূর্যের উদ্দেশে রওনা দেয় নাসার মহাকাশ যান পার্কার সোলার প্রোব। এর আগে কয়েকবার সূর্যের কাছাকাছি গিয়েও ব্যর্থ হয়েছে নাসার এই অভিযান। তবে এবার মানব সভ্যতায় অনন্য এক ইতিহাস গড়েছে ‘পার্কার সোলার প্রোব’।
এছাড়াও ইতিহাসের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী টেলিস্কোপ জেমস ওয়েবের মহাকাশ যাত্রারও সাক্ষী হয়েছে ২০২১ সাল। ২০২১ সাল জুড়েই নানা সাফল্য পেয়েছেন মহাকাশ বিজ্ঞানীরা। বিশ্ব সাক্ষী হয়েছে ঐতিহাসিক সব ঘটনার। এ বছরের সবচেয়ে বড় সাফল্য মহাকাশ পর্যটনের যাত্রা। ১১ জুলাই প্রথমবারের মতো পর্যটক হিসেবে মহাকাশ সফরে যান ব্রিটিশ ধনকুবের রিচার্ড ব্র্যানসন। ব্যবহার করেন নিজ প্রতিষ্ঠান ভার্জিন গ্যালাকটিকের তৈরি রকেট ইউনিটি টোয়েন্টি টু। দুই পাইলটসহ ৫ জনকে নিয়ে এক ঘণ্টার সফরে যান তিনি।
এর ঠিক ৯ দিন পর ব্র্যানসনের এই কীর্তি ছাড়িয়ে যায় ইলন মাস্কের স্পেইসএক্স। নিজেদের ক্রু ড্রাগন রকেটে করে অ্যামাজনের মালিক জেফ বেজোসসহ ৪ জনকে মহাকাশ ভ্রমণে পাঠায় প্রতিষ্ঠানটি।
তবে উল্লেখ্যযোগ্য দিকটি ছিল কোনো পেশাদার নভোচারী ছাড়াই অভিযানটি পরিচালনা করেন তারা। ইন্সপিরেশন ফোর নামে তিন দিনের এই অভিযানে পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে ৫৮০ কিলোমিটার উচুঁতে গিয়েছিলেন তারা।
পর্যটক ভ্রমণের পর বিজ্ঞানীদের পরবর্তী চ্যালেঞ্জ ছিল মহাকাশে সিনেমার শ্যুটিং। অক্টোবরের শুরুতে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের উদ্দেশে রওনা দেন রুশ পরিচালক ক্লিম শিপেঙ্কো, অভিনেত্রী ইউলিয়া পিরিসিল্ড। তাদের সঙ্গে ছিলেন আরও দুই নভোচারী। ১২ দিন শুটিং করেন তারা।
বছরজুড়ে মঙ্গল, বুধ ও চাঁদ অভিযানেও উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। বছরের মাঝামাঝিতে প্রথম বুধ গ্রহের ছবি পাঠায় ইউরোপ-জাপানের যৌথ মহাকাশযান বেপি কলম্বো। মঙ্গল গ্রহ থেকে প্রথমবারের মতো পাথরের নমুনা সংগ্রহ করে নাসার পারসিভারেন্স রোভার।
এ বছরই নিজস্ব মহাকাশ স্টেশনের প্রধান ও স্থায়ী অংশ স্থাপন করে মাইলফলক স্পর্শ করেছে চীন। অন্যদিকে মহাকাশের বর্জ্য পুনর্ব্যবহার করে জ্বালানি তৈরির প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে অস্ট্রেলিয়া। বছরের একদম শেষ ভাগে মহাকাশবিদ্যার ইতিহাসে সবচেয়ে ক্ষমতাশালী টেলিস্কোপ জেমস ওয়েব মহাকাশে পাঠিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এতে মহাকাশ গবেষণায় যোগ হলো নতুন এক মাত্রা।