রাজধানীর পল্লবী থানা এলাকা থেকে এক কোটি ২০ লাখ টাকার জাল নোটসহ চক্রের অন্যতম হোতা ছগির হোসেন (৪৭) এবং তাঁর দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব। গতকাল সোমবার রাতে জাল নোট তৈরির সরঞ্জামও উদ্ধার করেছে র্যাব।আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, ‘প্রতি এক লাখ জাল নোট চক্রটি ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রি করত।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গতকাল সোমবার রাতে র্যাব-৪-এর একটি দল ঢাকার মিরপুরের পল্লবীতে অভিযান চালিয়ে সংঘবদ্ধ জাল নোট তৈরি চক্রের মূল হোতা ছগির হোসেন (৪৭), সেলিনা আক্তার পাখি (২০) ও রুহুল আমিনকে (৩৩) গ্রেপ্তার করেছে। তাঁদের কাছ থেকে এক কোটি ২০ লাখ টাকা মূল্যমানের জাল নোট, পাঁচটি মোবাইল ফোন এবং দুটি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া জাল নোট তৈরির বিপুল সরঞ্জামাদিও জব্দ করা হয়।
খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘গত ২৮ নভেম্বর র্যাব-৪ মিরপুর মডেল থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২৮ লাখ ৫৩ হাজার টাকা মূল্যমানের জাল নোটসহ জাল নোট তৈরি ও বিক্রেতা চক্রের সক্রিয় চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। পরবর্তীতে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এই চক্রটির মূল হোতা ও অন্যান্য সহযোগীদের সম্পর্কে জানা যায়। পরে র্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়ে গতকাল এ অভিযান চালায়।’
গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, তাঁরা পরস্পর যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা ও বরিশালসহ বিভিন্ন এলাকায় এই জাল নোট তৈরি করে বিভিন্ন লোকদের কাছে কম মূল্যে জাল নোট বিক্রি করে আসছিলেন। এ চক্রটির মূল হোতা ছগির হোসেন। চক্রটি বরিশাল ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় এ জাল নোটের ব্যবসা চালায়। চক্রে ১৫ থেকে ২০ জন জড়িত রয়েছে।
খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘গ্রেপ্তার করা ছগির হোসেন ১৯৮৭ সালে বরগুনা থেকে ঢাকায় এসে প্রথমে একটি হোটেল বয়ের কাজ নেয়। পরবর্তীকালে ভ্যানে ফেরি করে গার্মেন্টস পণ্য বিক্রি করত। পোশাক বিক্রির সময় ছগিরের সঙ্গে ইদ্রিস নামের একজনের পরিচয় হয়। পরিচয়ের সুবাদে তাদের মধ্যে সু-সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ইদ্রিসের মাধ্যমে ছগিরের জাল নোট তৈরির হাতেখড়ি হয়।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রথমে ইদ্রিস জাল নোট বিক্রি ও পরবর্তীকালে জাল নোট তৈরি শেখে। ২০১৭ সালে জাল নোটসহ ইদ্রিস ও ছগির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়। এক বছর জেল খেটে পুনরায় ছগির ২০১৮ সাল থেকে জাল নোট তৈরি শুরু করে। এসব জাল নোটগুলো ছগির চক্রে থাকা অন্যান্য সহাযোগীদের মাধ্যমে বিক্রি করত।
খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘প্রতি এক লাখ জাল নোট ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রি করত চক্রটি। ছগিরের সহযোগীরা মাঠ পর্যায়ে সরবরাহ ও বিক্রি করত। টার্গেট বা চাহিদা অনুযায়ী ছগির প্রতি মাসে তার সহযোগীদের বোনাসও দিত। করোনাকালীন সময়ে মাঝে মধ্যে ছগির নিজেও এ জাল নোট স্থানীয় বাজারে ব্যবহার করত। কয়েকবার সে সাধারণ জনগণের হাতে ধরাও পড়েছিল বলে জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পেরেছি। চক্রটি সাধারণত কোনো মেলায়, ঈদে পশুর হাটে ও অধিক জনসমাগম অনুষ্ঠানে জাল নোট বিভিন্ন কৌশলে ব্যবহার করত। বর্তমানে বাণিজ্য মেলা ও শীতকালীন প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিভিন্ন উৎসব ও মেলাকে কেন্দ্র করে বিপুল পরিমাণ জাল টাকা তৈরির পরিকল্পনা করছিল তারা।’