আবারও বিশ্বজুড়ে বাড়ছে করোনাক্রান্তের সংখ্যা। ইউরোপ, লাতিন আমেরিকা কিংবা পাশের দেশ ভারতে প্রতিদিন রেকর্ডসংখ্যক রোগী শনাক্ত হচ্ছে। যাদের অধিকাংশই করোনা টিকা নিয়েছেন। টিকা নেওয়ার পরেও কেন এই ভাইরাস আক্রান্ত করছে? তাহলে কি টিকা নেওয়াটা অর্থহীন?
প্রচলিত টিকাগুলোর কার্যকারিতা এবং টিকা নেওয়া লোকেরাও কেন ভাইরাসে সংক্রমিত হচ্ছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ রেনাটো কেফুরি জানান, এই টিকাদান কর্মসূচির লক্ষ্য কখনোই সংক্রমণ পুরোপুরি প্রতিরোধের জন্য ছিল না। আসল লক্ষ্য ছিল- করোনাভাইরাস শরীরে ঢুকে পড়লেও তার প্রভাব যেন কম ক্ষতিকর হয়, তা নিশ্চিত করা।
রেনাটো কেফুরি বলেন, ‘আসলে এই টিকাগুলো কোভিডের অধিকতর বিপজ্জনক ধরনগুলোর বিরুদ্ধে অনেক ভালোভাবে সুরক্ষা দিতে পারে- অপেক্ষাকৃত মৃদু বা নিরীহ ধরনগুলোর তুলনায় যেগুলোতে অনেক সময় কোন উপসর্গও থাকে না’
উদাহরণ হিসেবে ধরা যেতে পারে ইনফ্লুয়েঞ্জার জন্য ফ্লুর টিকা, যা কিনা প্রতি বছরই দেয়া হয়। এর লক্ষ্য কিন্তু ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সংক্রমণ পুরোপুরি প্রতিরোধ করা নয়। বরং উদ্দেশ্য হচ্ছে – এই ভাইরাসের কারণে যাদের প্রায়ই সবচেয়ে গুরুতর জটিলতা দেখা দেয়- যেমন শিশু, গর্ভবতী নারী এবং বয়স্ক মানুষেরা- তাদের আক্রান্ত হওয়া ঠেকানো।
কোভিডে গুরুতর অসুস্থতার বিরুদ্ধে এ সুরক্ষা একটা দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। কারণ শ্বাসতন্ত্রের রোগে গুরুতর অসুস্থ রোগীর সংখ্যা কমানো মানেই হচ্ছে হাসপাতালে জরুরি চিকিৎসাপ্রার্থীর ভিড় কমে যাওয়া।
কমনওয়েলথে ফান্ডের এক জরিপ অনুযায়ী- শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই করোনাভাইরাসের টিকার কারণে নভেম্বর ২০২১ পর্যন্ত ১ কোটি ৩ লক্ষ মানুষের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ঠেকানো গিয়েছে এবং মোট ১১ লক্ষ মানুষের মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব হয়েছে।
অন্য একটি সমীক্ষা বলছে, টিকার বদৌলতে ইউরোপের ৩৩টি দেশে ৬০ বছরের বেশি লোকদের ক্ষেত্রে ৪৭০,০০০ জনের প্রাণরক্ষা সম্ভব হয়েছে।
তবে তাহলে কি টিকা নেওয়ার প্রয়োজনই নেই? এ ব্যাপারে রেনাটো কেফুরি বলেন, ‘কেউ যদি মনে করেন যে টিকা নেবার কোন দরকারই নেই, কারণ সবাই শেষ পর্যন্ত অসুস্থ হবেই – তাহলে তা হবে চরম ভুল। এই টিকা করোনাভাইরাসকে একটি অপেক্ষাকৃত সরল রোগে পরিণত করতে সফল হচ্ছে- যা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ঘরে থেকেই চিকিৎসা করা সম্ভব।’