সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) আমরণ অনশনরত কয়েকজন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এদের মধ্যে ছয়জনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। বাকিদের গুরুতর সমস্যা দেখা না দিলেও দুর্বলতা আর ব্লাড প্রেশার নেমে যাওয়ায় ক্যানোলার মাধ্যমে লিকুইড স্যালাইন ও ভিটামিন সাপ্লিমেন্টারি দেওয়া হচ্ছে।
কিন্তু যে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে এই আমরণ অনশন- সেই দাবি এখনও পর্যন্ত আদায় হয়নি। এরইমধ্যে অনশনের সময় গড়িয়েছে প্রায় ৩৪ ঘণ্টায়। দফায় দফায় শিক্ষকরা অনশনকারী শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলেও কোন সমাধান হয়নি। এমন অবস্থায় মধ্যরাতে কয়েকশ শিক্ষার্থী মিলে মশাল মিছিল করেছেন।
বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) রাত ১২টায় উপাচার্যের বাসভবনের সামনে থেকে মশাল মিছিল শুরু করেন তারা। মশাল মিছিল চেতনা একাত্তরের সামনে পর্যন্ত প্রদক্ষিণ করে আবার উপাচার্যর বাসভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
এদিকে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শাখা ছাত্রলীগের সাত সদস্যের একটি মেডিকেল টিম অনশনরত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন।
অনশনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা পানিসহ কোনো ধরনের তরল খাদ্য গ্রহণ করছেন না। যার ফলে অনেকেই নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছেন। উপাচার্যের পদত্যাগ হওয়া পর্যন্ত তারা অনশন চালিয়ে যাবেন।
এদিকে শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙাতে বুধবার রাত পৌনে ৯টায় শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধি দল সেখানে উপস্থিত হন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তাদের দাবিড় অনড় থাকেন।
শিক্ষক প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে থাকা কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে কথা বলতে চাইলে তারা শর্ত জুড়ে দেয়। তারা জানতে চায়, তাদের আন্দোলনে আমাদের সমর্থন আছে কিনা। এ সময় তারা শুধু ‘ইয়েস অর নো’ শ্লোগান দিতে থাকে। এরপর তারা এটি ছাড়া আর কোনো শব্দ শুনতে চায়নি। পরে বাধ্য হয়ে কর্মসূচিস্থল ত্যাগ করেন শিক্ষকরা।
অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আমরা এসেছিলাম আমাদের শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙাতে। তাদের কাছে সে সময়টুকু চেয়েছি যেন এ ঘটনার পেছনে কারা জড়িত সেটা খুঁজে বের করতে পারি। শিক্ষার্থীরা বলছে উপাচার্যের নির্দেশে হামলা হয়েছে। তদন্তে যে দোষী হবে সে দায় নেবে। আমরা চাই উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত হোক। সরকার ও সিলেটের নেতৃবৃন্দ এখানে সম্পৃক্ত। যার নির্দেশে হামলা হয়েছে সেখানে উপাচার্যসহ যেই জড়িত থাকুক তাকে দায় নিতে হবে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা আমাদের ওই সুযোগটা দেয়নি।
বৃহস্পতিবার দফায় দফায় শিক্ষকরা অনশনকারী শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করে কোনো সুরাহায় আসতে পারেননি।
এদিকে বিকেল সাড়ে ৫টায় সিলেট মহানগর বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল শাবিপ্রবির আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলতে আসেন। শিক্ষার্থীরা তাদের কথা বলার সুযোগ না দিলেও প্রতিনিধি দল সাংবাদিকদের সাথে কথা বলে শিক্ষার্থীদের সাথে তারা একমত পোষণ করেন। প্রতিনিধি দলে ছিলেন- সিলেট মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকী, সদস্য-সচিব মিফতা সিদ্দিকী, কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী প্রমুখ।