টোঙ্গায় সুনামির আঘাত হানার পর সাগরে ভেসে গিয়ে ২৭ ঘণ্টা সাঁতরে তীরে ফিরেছেন এক ব্যক্তি। গেল শনিবার (১৫ জানুয়ারি) দ্বীপ দেশটিতে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে ভয়াবহ সুনামির সৃষ্টি হয়েছে।
এতে ঢেউয়ের তোড়ে সাগরে ভেসে যান আতাতা অঞ্চলের স্থানীয় লিসালা ফোলাও নামের ৫৭ বছর বয়সী এক ব্যক্তি। তিনি আবার আংশিক বিকলাঙ্গ। ঠিকমত হাঁটতে পারেন না।
বিবিসিকে এই টোঙ্গাবাসী বলেন, সাগরে কঠিন জীবনযুদ্ধে এক সময় ভাসমান একটি কাঠের গুঁড়ি আঁকড়ে ধরেছিলেন। তীরে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত তিনি সেটি হাতছাড়া করেননি।
এবারের সুনামিতে তিনজন নিহত হলেও এখন পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। সিএনএন জানায়, বিশাল সমুদ্রে এত দীর্ঘ সময় ভেসে থেকে বেঁচে ফিরে সুপারহিরো অ্যাকুয়ামানের তারিফ কুড়াচ্ছেন ফোলাও।
ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে ওই ব্যক্তি বলেন, ওইদিন ছোট্ট বিচ্ছিন্ন দ্বীপ আতাতায় নিজের বাড়ির রঙের কাজ করছিলেন। তখনই সন্ধ্যা ৭ টা। তার ভাই সুনামি আসছে বলে তাকে সতর্ক করেন।
এরপর ৬ মিটারেরও বেশি উঁচু ঢেউয়ে ভেসে যান তিনি ও তার ভাগনি। দুজনই তখন একে অপরকে ডাকাডাকি করছিলেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পর আর ভাগনির ডাক তিনি শুনতে পাননি।
ফোলাও জানান, প্রথম ধেয়ে আসা ঢেউ থেকে বাঁচতে তিনি একটি গাছে ওঠেন। কিন্তু গাছ থেকে নামার পরই আরেকটি ঢেউ এসে ধাক্কা মেরে তাকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এসময় তার সন্তান তাকে ওপর থেকে ডাকলেও সাড়া দেননি। কারণ, তিনি চাননি সে তাকে খুঁজতে বের হোক।
তিনি বলেন, সাগরে পড়ার পর মনে হয়েছিল, আমি এখন জীবন-মরণের মাঝখানে আছি। তীরে পৌঁছানোর আগে যে কোনো সময় মারা যেতে পারি।
এরপর কেবলই বড় বড় ঢেউয়ের মধ্যে ভাসতে থাকা। সারাভর বিশাল সমুদ্রে ভাসছিলেন। ভোরের দিকে তিনি একটি পুলিশের নৌকার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন। কিন্তু তারা ফোলাওকে দেখতে পায়নি।
একটি কাঠের গুঁড়ি পাওয়ার আগ পর্যন্ত ৯ বার পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। বলছিলেন, যখন আটবার আমি পনির নিচে তলিয়ে গেলাম, তখন ভেবেছিলাম পরের বার আর ওঠতে পারব না। কারণ, আমি কেবল বাহুর ওপর ভর করে ভাসছিলাম।
তবে নবমবার তলিয়ে যাওয়ার সময় একটি কাঠের গুঁড়ি পেয়ে সেটিকে শক্ত করে ধরে ফেলেন। সেটি ধরতেই ভাসতে থাকেন। এরপর ধীরে ধীরে সাঁতরে মূল দ্বীপ টোঙ্গাটাপুতে পৌঁছান ফোলাও।
তিনি বলেন, ঢেউ যখন আমার দিকে ধেয়ে আসছিল, যখন আমি ভয় পাই। কিন্তু ঈশ্বরের ওপর আমার আস্থা ছিল—তিনি আমাকে রক্ষা করবেন। আমি অন্তত আটবার পানিতে ডুবে যাই, আমার একটি পা অক্ষম, সেটি কোনো কাজ করে না। সাগরের ঢেউয়ে আমি পাক খাচ্ছিলাম। বারবার পানিতে নিচে চলে যাচ্ছিলাম।