সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ পদত্যাগ করলে অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরাও পদত্যাগ করবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ এক ভার্চুয়াল বৈঠকের আয়োজন করে। ওই বৈঠকে ফরিদ উদ্দিনের পক্ষে অবস্থান নিয়ে এ হুঁশিয়ারি দেন উপাচার্যরা।
বর্তমানে দেশের ৫০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ৩৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা ওই বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। শাবিপ্রবির উপাচার্য ফরিদ উদ্দিনও এতে উপস্থিত ছিলেন।
ফরিদ উদ্দিনের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে অন্যান্য উপচার্যরা বলেছেন, শাবিপ্রবিতে যে ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে এতে যদি উপাচার্যকে পদত্যাগ করতে হয়, তাহলে তারাও পদত্যাগ করতে প্রস্তুত।
বৈঠকে উল্লেখ করা হয়, এভাবে উপাচার্যকে ধাওয়া দিয়ে অপমান করবে। এমন হলে বিশ্ববিদ্যালয় চালানো যাবে না। সব বিশ্ববিদ্যালয়েই এরকম পরিস্থিতি হতে পারে। তাই ফরিদ উদ্দিনকে যদি পদত্যাগ করতে হয়, তাহলে অন্যরাও পদত্যাগ করতে প্রস্তুত আছেন।
পদত্যাগের প্রসঙ্গটি বৈঠকে তোলেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আনোয়ার হোসেন। তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, অন্যান্য উপাচার্যদের পদত্যাগের বিষয়টি বৈঠকে উত্থাপন করা হয়েছে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য যখন ঘটনাপ্রবাহ বলেন, তখন সব শুনে উপাচার্যদের প্রতিক্রিয়া ছিল এই ঘটনাপ্রবাহে উনি পদত্যাগ করতে পারেন না। আর তিনি যদি পদত্যাগ করেন তাহলে তারাও পদত্যাগ করবেন বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে অনেক কথাই হয়েছে। তবে এ ধরনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি। আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান চাই।’
তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সংগঠনের এই সিদ্ধান্ত সরকার বা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি বলে জানান উপাচার্যরা।
এদিকে, শাবিপ্রবির চলমান সংকট সমাধানে শনিবার (২২ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে বসেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এসময় তিনি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে আলোচনায় বসার আহ্বান জানান।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী শহীদুল্লাহ, সদস্য মোহাম্মদ আলমগীর, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি তুলসী কুমার দাস, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মুহিবুল আলম, ফিজিক্যাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন মো. রাশেদ তালুকদার, অ্যাপ্লায়েড সায়েন্সেস অনুষদের ডিন আরিফুল ইসলাম ও ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন খায়রুল ইসলাম।
ডা. দীপু মনি বলেন, শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসুক আমরা সেটা চাই। আলোচনাই সমস্যা সমাধানের সবচেয়ে ভালো পন্থা। আমি আলোচনার জন্য প্রস্তুত, শিক্ষকদের সঙ্গে অনশনকারীরা কথা বলতে পারছেন না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে ‘সন্দেহ’ পোষণ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা পরিষ্কার না এই আন্দোলনে আরও কেউ জড়িত কি না, তাদের ইন্ধনে কেউ কলকাঠি নাড়ছে কি না? তবে ওইদিনের ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, পুলিশি অ্যাকশনটা দুঃখজনক, তেমনি শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করাও দুঃখজনক।
অন্যদিকে, শিক্ষামন্ত্রীর প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে শনিবার (২২ জানুয়ারি) রাতে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে অনলাইনে কথা বলতে চান সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে বলা হয়, আমরা শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসতে চাই। এক্ষেত্রে অনলাইনে প্ল্যাটফর্মে আমরা বসতে চাই। এছাড়াও শিক্ষামন্ত্রী সরাসরি সিলেট না আসলেও মন্ত্রীর প্রতিনিধি আসলে তাদের সঙ্গে বসতে রাজী আছি।
এ সময় তাদের পক্ষ থেকে উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়ে অনড় থাকা সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করা হয়।
টানা দশ দিনের আন্দোলনে শনিবার উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে কাফনের কাপড় পরিধানের মাধ্যমে মৌন মিছিল কর্মসূচি পালন করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও এদিন রাত ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্ত্বর এলাকায় মোমবাতি প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি আয়োজন করা হয়।
গত ১৩ জানুয়ারি রাতে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের ছাত্রীরা। পরে ১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ছাত্রীদের আন্দোলনে হামলা চালায় ছাত্রলীগ।
এর পরের দিন বিকেলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। তখন শিক্ষার্থীদের ব্যাপক লাঠিপেটা করা হয় এবং শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে শটগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে পুলিশ।
পরে ওইদিন রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ও শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীরা তা উপেক্ষা করে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন।