বেসরকারি একটি ব্যাংকের ১৮ কোটি টাকা লুটের চেষ্টা করছিলো, সেই প্রতিষ্ঠানেরই একটি চক্র। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের সেই চেষ্টা সফল হয়নি। ধরা পড়তে হয়েছে আইনের হাতে।
চক্রের মূল হোতা নিজেই একজন ব্যাংক কর্মকর্তা। তিনি বেসরকারি ডাচ বাংলা ব্যাংকে চাকরি করেন। পুলিশ এই ঘটনায় ওই ব্যাংক কর্মকর্তাসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে এই ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরের দিন শুক্রবার দুপুরে গ্রেপ্তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ।
এ সময় ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান জানান, দুইটি প্রতিষ্ঠানের হিসাব থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টার মধ্যেই তাদের গ্রেপ্তার হয়।
তিনি বলেন, অনলাইনে এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে তাৎক্ষণিক টাকা ট্রান্সফারের বিশেষায়িত পদ্ধতি- রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট (আরটিজিএস) ব্যবহার করে দুই ব্যাংক থেকে ১৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছিল চক্রটি।
গ্রেপ্তার ব্যাংক কর্মকর্তার নাম জাকির হোসেন। তিনি ডাচ বাংলার কারওয়ান বাজার শাখায় এসএমই সেলস টিম ম্যানেজার হিসাবে কাজ করছিলেন। অন্যরা হলেন- ইয়াসিন আলী, মাহবুব ইশতিয়াক ভূইয়া, আনিছুর রহমান সোহান, দুলাল হোসাইন, আসলাম, আব্দুর রাজ্জাক, জাকির হোসেন, আনোয়ার হোসেন ভুইয়া ও নজরুল ইসলাম।
ডাচ বাংলা ব্যাংকে চাকরি করার সুবাদে ব্যাংকের সার্ভার থেকে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টের তথ্য সংগ্রহ করতেন জাকির হোসেন।
যেসব ব্যাংক হিসেবে টাকার পরিমাণ বেশি থাকতো তাদের ব্যাংক হিসাবের সই জাল করে আরটিজিএসের মাধ্যমে তহবিল স্থানান্তরের পরিকল্পনা করতেন তিনি।
রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডে (ডিবিবিএল) থাকা ওয়াল্টন গ্রুপের অ্যাকাউন্ট থেকে সাড়ে ছয় কোটি টাকা আরটিজিএস ফর্মে টান্সফারের একটি আবেদন আসে। সেই টাকা এবি ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় টান্সফারের আবেদন করা হয়।
ডিবিবিএল’র বসুন্ধরা শাখার ব্যবস্থাপকের কাছে টান্সফারের আবেদনটি অস্বাভাবিক মনে হওয়ায় তিনি সঙ্গে সঙ্গে ওয়াল্টন গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
পরে ওয়াল্টন গ্রুপ থেকে ব্যাংক ব্যবস্থাপককে বলা হয় তারা টাকা টান্সফারের আবেদন করেননি। পরে টান্সকফারের আবেদনটি স্থগিত করা হয়।
এ বিষয়ে ওয়াল্টন গ্রুপের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার ডিএমপির ভাটারা থানায় একটি অভিযোগ করা হয়। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে টাকা টান্সফার করা চক্রের ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে ভাটারা থানা পুলিশ।
চক্রের মূলহোতা জাকির হোসেন ডিবিবিএলে চাকরি করার সুবাদে ব্যাংকের সার্ভার থেকে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টের তথ্য সংগ্রহ করেন।
যেসব হিসাবে টাকার পরিমাণ বেশি তাদের ব্যাংক হিসেব থেকে সই জাল করে আরটিজিএসের মাধ্যমে টাকা ট্রান্সফারের পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনার পর জাকির ইয়াসিন আলীকে সই জালিয়াতির কাজ দেন।
পরে ইয়াসিন আলী স্বাক্ষর জাল করে মাহবুব ইশতিয়াক ভূইয়ার পরিচালিত অ্যাকাউন্ট এনআই করপোরেশন, বিডি লি. নামে এবি ব্যাংক লি. মতিঝিল শাখায় স্থানান্তরের পরিকল্পনা করে জাল ব্যাংক দলিল তৈরি করে। পরে তারা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য অন্যদের ঠিক করেন।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানায়, তারা একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। দীর্ঘদিন দিন ধরে তারা ডিবিবিএলের সার্ভার থেকে তথ্য সংগ্রহ করে টাকা আত্মসাৎ করার পরিকল্পনা করছিলো।
এভাবে জালিয়াতি করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল একটি কোম্পানির সাড়ে ছয় কোটি টাকা। আরেক প্রতিষ্ঠানের ১২ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার পরিকল্পনাও ছিল তাদের।