গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে এখনো কাটেনি জেব্রা মৃত্যুর রহস্য। পার্কে পরপর ৯টি জেব্রার মৃত্যুর ঘটনায় কর্তৃপক্ষ যে কারণ দেখাচ্ছে, তা মানতে নারাজ প্রাণী বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সংঘর্ষে জড়িয়ে মৃত্যু সন্দেহজনক। দিয়েছেন অন্যান্য প্রাণীর জীবন রক্ষায় মৃত্যুর সঠিক কারণ খুঁজে বের করার তাগিদ।
কোর সাফারি বেষ্টনীতে ২ জানুয়ারি প্রথম পেট ছিদ্র করা অবস্থায় পাশাপাশি দুটি জেব্রার মরদেহ চোখে পড়ে। এর একদিন পর একই ক্ষতচিহ্নের আরও একটি মৃত জেব্রা পাওয়া যায়। পরবর্তীতে মুখে লালা, রক্ত আসা ও শরীরে উচ্চ তাপমাত্রা নিয়ে মারা যায় আরও ছয়টি জেব্রা। পরপর একই বেষ্টনীতে মাত্র তিন সপ্তাহের ব্যবধানে জেব্রা মৃত্যুর এমন সংবাদ গণ্যমাধ্যমে প্রকাশ হলে শুরু হয় তোলপাড়। পার্কজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক।
তড়িঘড়ি করে এক সংবাদ সম্মেলনে গঠিত মেডিকেল বোর্ড মৃত্যুর কারণ হিসেবে নিজেদের মধ্যে মারামারি ও ব্যাকটেরিয়ার কথা জানান। এদিকে এই বিষয়ে ঘোর আপত্তি জানিয়েছেন প্রাণী বিশেষজ্ঞরা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ও অধ্যাপক ড. আ ন ম আমিনুর রহমানের মতে, জেব্রা নিরীহ স্বভাবের প্রাণী। সচরাচর সংঘর্ষে জড়ায় না। যেহেতু জেব্রার শিং নেই তাই নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ হলেও মৃত্যুর মতো গুরুতর আঘাত পাওয়ার আশঙ্কা নেই।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাফারি পার্কের অন্যান্য প্রাণী রক্ষায় স্বাস্থ্যসম্মত খাবার সরবরাহ ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় না রাখলে ভবিষ্যতে প্রাণিসম্পদ হুমকির মুখে পড়বে বলে জানান এ বিশেষজ্ঞ।
আরও পড়ুন: জেব্রার মৃত্যু নিজেদের মধ্যে মারামারিতে, দাবি কর্তৃপক্ষের
পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় আফ্রিকান জেব্রা মারা যাওয়ার সঠিক কারণ ও প্রতিকারে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার সাফারি পার্কের ঐরাবতী রেস্ট হাউসে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে বোর্ড বসেছিল। বোর্ডের সভাপতি ছিলেন জাতীয় চিড়িয়াখানার সাবেক কিউরেটর ও চিফ ভেটেরিনারি কর্মকর্তা এ বি এম শহীদ উল্লাহ। বৈঠক শেষে জেব্রাসহ অন্যান্য প্রাণীর নিরাপত্তায় ১০টি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়।
এগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রাণীর ছাউনি জীবাণুমুক্তকরণ, সব প্রাণীকে টিকার আওতায় আনা, অধিক পরিমাণে কাঁচা ঘাস না খাওয়ানো, চপার মেশিন দিয়ে ঘাস কেটে প্রাণীকে খাওয়ানো, যে ঘাস দেওয়া হচ্ছিল, সেটি বন্ধ করে অন্য জায়গা থেকে ঘাস এনে বাকি জেব্রাগুলোকে খাওয়ানো, মাংসাশী প্রাণীর খাবারের ক্ষেত্রে আরও সচেতন হওয়া, দানাদার খাদ্য পরিবেশনের আগে ফাঙ্গাস না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া, দর্শনার্থী বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ প্রাণীকে যেন খাবার দিতে না পারে, স্পর্শকাতর প্রাণীর ওপর নজর রাখতে নাইট ভিশন ক্যামেরা স্থাপন করা, খালি জায়গায় ঘাস উৎপাদনের ব্যবস্থা করা।