মাত্র সাত দিনে তড়িঘড়ি করে সরকার নির্বাচন কমিশন আইন পাস করেছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকারকে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। নইলে সব রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
রোববার (৩০ জানুয়ারি) বিকেলে বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির ‘২৫ জানুয়ারি ১৯৭৫: বাকশাল’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনায় যুক্ত হয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন। সভায় সারা দেশসহ বিভিন্ন দেশে বিএনপির প্রবাসী নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
তিনি বলেন, আমরা পরিষ্কার করে বলেছি, আমরা দ্রুত দাবি করেছি, সোচ্চার কণ্ঠে বলছি যে, এই সরকারের অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত। নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় একটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এদেশে আবার নতুন করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন-সোপান আমরা নির্মাণ করতে পারি আমাদের নেতার নেতৃত্বে।
ফখরুল বলেন, ১৯৭৫ সালে যে কাজটা করতে পারেনি, বিগত ১৪ বছর ধরে আওয়ামী লীগ অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে সেই কাজ করার জন্য ধীরে ধীরে পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে গেছে। একটা মোড়ক রেখেছে সামনে, একটা ছদ্মবেশ-অবয়ব-লেবাস যে বহু দলীয় গণতন্ত্র এখানে আছে। আসলে এখানে কোনো বহুদলীয় গণতন্ত্র নেই।
সরকারের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, একটা নির্বাচনের লেবাস সামনে রেখেছে সরকার। এরই মধ্যে তারা দুটি নির্বাচন করেছে, যেখানে সত্যিকার অর্থে জনগণ ভোট দেওয়ার অধিকার পর্যন্ত পায়নি। এবার একটা আইনও (সদ্য জাতীয় সংসদে পাস হওয়া নির্বাচন কমিশন গঠন আইন) তৈরি করলো কদিন আগে, যে আইনটি ঠিক সেই বাকশালের মতোই।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাকশাল’ একটি গালিতে পরিণত হয়েছে। কেন? এই বাকশালের মধ্য দিয়ে সেদিন দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করা হয়েছিল, রাজনীতিকে ধ্বংস করা হয়েছিল, মানুষের স্বপ্নকে ধ্বংস করা হয়েছিল। একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে সেদিন দেশ ও জাতিকে গভীর অন্ধকারের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমরা আজ ঠিক একইভাবে দেখছি আওয়ামী লীগ অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে দেশের অর্থনীতিকে দলীয়করণ করেছে। দেশে এখন লুটতরাজের অর্থনীতি বিরাজমান। রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মকাণ্ডকে অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে দমন করা হচ্ছে। স্বাধীনচেতা, গণতন্ত্রকামী মানুষকে হত্যা-গুমের মধ্য দিয়ে দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। প্রতিবাদের সব ভাষা বন্ধ করা হচ্ছে। বিভিন্ন নির্বতনমূলক আইন তৈরি করে, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মতো আইন তৈরি করে যারা কথা বলতে চান তাদের কথা বলা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, আজ ৪৭ বছর পরে আবার বাকশাল প্রতিষ্ঠার যে নীলনকশা চলছে, এটিকে আমাদের প্রতিহত করতে হবে এবং সেটা জনগণকে সঙ্গে নিয়েই করতে হবে। আমাদের নেতা তারেক রহমানের নেতৃত্বে, বিএনপির নেতৃত্বে এই প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, একটা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ একটা উন্নত বাংলাদেশ একটা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ দেখার যে স্বপ্ন আমরা প্রতি মুহূর্তে বাঁচিয়ে রাখি, সেই স্বপ্নকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে আজ আমাদের সবাইকে ত্যাগ স্বীকার করে দৃঢ ঐক্যবদ্ধতার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে একত্রে নিয়ে আসতে হবে। রাজনৈতিক ব্যক্তিদের একত্রিত করে গণতন্ত্রকামী মানুষকে এক করে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। এ ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী বাকশালের নব্য প্রেতাত্মার যে সরকার তাকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থেই দেশে একটা জনগণের সরকার, জনপ্রতিনিধির পার্লামেন্ট গঠন করতে হবে।
বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আবদুস সালামের পরিচালনায় ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।