সেনাবাহিনীর মেজর অবসরপ্রাপ্ত সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় প্রধান দুই অভিযুক্ত বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ দাশের সর্বোচ্চ ও দৃষ্টান্তমূলক সাজা চায় পরিবার। এ ছাড়া অন্য আসামিদের তাদের অপরাধের ভিত্তিতে সাজা হবে বলে প্রত্যাশা করেছেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস।
তিনি বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে একই সঙ্গে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ হবে বলে আমি আশা করি। অপরাধী যেই হোক না কেন, অপরাধ করলে কেউ আইনের হাত থেকেও সাজা পাওয়ার হাত থেকে রেহাই পাবে না। এই রায়ের মাধ্যমে সেটি ও প্রতিষ্ঠিত হবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা।
বহুল আলোচিত এ মামলাটির রায় ঘোষণা করা হবে আগামীকাল সোমবার (৩১ জানুয়ারি)। কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাঈল এ রায় ঘোষণা করবেন।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি ফরিদুল আলম বলেন, আমরা অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছি। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে, পরিকল্পিতভাবে পরস্পর যোগসাজশে হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে বিধায় আমরা হুজুর আদালতে আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছি। পুলিশি আবরণে, আইনি আবরণে এরকম নিষ্ঠুর ঘটনা যাতে আর না ঘটে, যেন আইনের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা থাকে।
আসামিপক্ষে মহিউদ্দিন খান বলেছেন, আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে বাদীপক্ষ ব্যর্থ হয়েছে। আমরা চাই এই মামলায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত হোক।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাত সাড়ে ৯টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এপিবিএন চেকপোস্টে পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।
হত্যাকাণ্ডের চার দিন পর ২০২০ সালের ৫ আগস্ট সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন কক্সবাজার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে।
মামলায় প্রধান আসামি করা হয় বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে। ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাশকে করা হয় দুই নম্বর আসামি। মামলার তিন নম্বর আসামি করা হয় বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে কর্মরত উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিতকে। আদালত মামলাটির তদন্তভার দেন কক্সবাজারের র্যাব-১৫কে।
৭ আগস্ট মামলার আসামি সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে তদন্তে নেমে হত্যার ঘটনায় স্থানীয় তিন বাসিন্দা, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্য ও ওসি প্রদীপের দেহরক্ষীসহ আরও মোট সাত জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এরপর গত ২৪ জুন মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি কনস্টেবল সাগর দেবের আদালতে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে আলোচিত এই মামলার ১৫ আসামির সবাই আইনের আওতায় আসে।
এ মামলায় চার মাসের বেশি সময় তদন্ত শেষে গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর ৮৩ জন সাক্ষীসহ অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র্যাব-১৫ এর জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম। ১৫ জনকে আসামি করে দায়ের করা অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকাণ্ডকে একটি ‘পরিকল্পিত ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলায় বর্তমানে কারাগারে থাকা ১৫ আসামি হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিত, বরখাস্ত সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, বরখাস্ত কনস্টেবল ছাফানুল করিম, বরখাস্ত কনস্টেবল কামাল হোসাইন আজাদ, আব্দুল্লাহ আল মামুন, কনস্টেবল রুবেল শর্মা ও কনস্টেবল সাগর দেব, বরখাস্ত এপিবিএনের উপপরিদর্শক (এসআই) শাহজাহান আলী, বরখাস্ত কনস্টেবল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, ও মো. রাজীব হোসেন, টেকনাফ থানায় পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মোহাম্মদ আইয়াজ ও মো. নেজামুদ্দিন।