নীলফামারী জেলায় ভয়াবহ সংক্রামক হয়ে উঠছে করোনাভাইরাস। গেলো ২৪ ঘন্টায় এ জেলায় মোট ১৪০টি নমুনা পরীক্ষায় ৬৫ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ৪৬ দশমিক ৪২ শতাংশ। যা এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ।
এদিকে জানুয়ারি মাসে এ জেলায় মোট এক হাজার ৪৩৮টি নমুনা পরীক্ষায় ৪০১ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার দাঁড়ায় ২৭ দশমিক ৮৮ শতাংশে। কিন্তু চলতি মাসের শেষ ১৪ দিনে এক হাজার ১৭২টি নমুনা পরীক্ষায় ৩৯৪ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়, ফলে শনাক্তের হার ৩৩ দশমিক ৬১ শতাংশে পৌঁছেছে। অর্থাৎ পুরো জানুয়ারি মাসের তুলনায় শেষ ১৪ দিনে শনাক্তের হার বেড়েছে ৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ।
এসব তথ্য নিশ্চিত করে নীলফামারী জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের করোনা নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্বরত কর্মকর্তা ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, রোববার (৩০ জানুয়ারি) সকাল থেকে সোমবার (৩১ জানুয়ারি) সকাল পর্যন্ত গেলো ২৪ ঘন্টায় জেলায় মোট ১৪০টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এতে ৬৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ৪৬ দশমিক ৪২ শতাংশ।
তিনি আরো জানান, চলতি বছরের ১ থেকে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৭ দিনে ২৬৬টি নমুনা পরীক্ষায় সাতজন করোনা রোগি শনাক্ত হন। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ছিলো ২ দশমিক ৬৩ শতাংশ। এরপর থেকেই ঊর্ধ্বমুখী হতে থাকে সংক্রমনের হার। ১৮ থেকে থেকে ৩১ জানুয়ারী পর্যন্ত ১৪ দিনে এক হাজার ১৭২টি নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয় ৩৯৪ জনের। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ৩৩ দশমিক ৬১ শতাংশ।
জেলায় সংক্রমণের হার উদ্বেগজনক হারে বাড়লেও বেশিরভাগ মানুষ মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি। গ্রামের হাট-বাজার এবং শহরের অফিস আদালতসহ জনবহুল বিভিন্ন স্থানে আগত বেশিরভাগ মানুষকে মাস্ক ছাড়া চলাচল করতে দেখা গেছে। পাশপাশি বিভিন্ন যানবাহনে যাত্রীদেরও একই অবস্থা। বাস এবং ইজিবাইকের আসনে ঘেষাঘেষি করে বসেও মাস্ক ব্যবহার করছেন না অধিকাংশ মানুষ।
জেলা শহরের বিভিন্ন বিপনি-বিতান এবং ওষুধের দোকানে আগতদের মধ্যে মাস্ক ব্যবহারের প্রবনতা কম। এমনকি এসব দেকানের মালিক ও কর্মচারীরাও মাস্ক ব্যহার করছেন না। সোমবার জেলা শহরের বিভিন্ন জনবহুল স্থান ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
এ বিষয়ে নীলফামারীর সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর কবির জানান, ২০২০ সালের ৮ এপ্রিল জেলায় প্রথম করোনা সংক্রমন শনাক্ত হয়। সে থেকে শুরু করে চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারী পর্যন্ত জেলায় চার হাজার ৮৬৪ আক্রান্ত হয়েছেন। এসময়ে মোট নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৩৮ হাজার ১৬ জনের। নমুনা পরীক্ষার ফলাফল পাওয়া গেছে ৩৭ হাজার ১১৪ জনের। এতে করে মহামারীর পুরো সময়জুড়ে গড় শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ১০ ভাগ।
মোট আক্রান্তদের মধ্যে থেকে সুস্থ্য হয়েছেন চার হাজার ৪০০ জন, আর মৃত্যু হয়েছে ৭৪ জনের। বতর্মানের চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৩৯০ জন। এদের মধ্যে নিজ বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৩৭৮ জন, নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে ১১ জন এবং রংপুর করোনা বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন একজন। জেলার মোট জনসংখ্যার বিপরীতে এখন পর্যন্ত ৬৫ শতাংশ মানুষ কোভিড-১৯ টিকা গ্রহণ করেছেন।
সংক্রমন বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, জনসচেতনতা বাড়ানোর কাজ স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষে অব্যাহত আছে। এরপরও মানুষ মাস্ক ব্যবহার করছেন না। জনসমাগম এড়িয়ে চলছেন না। মানুষের এমন অনিহার কারণে সংক্রমণ বাড়ছে। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে সামনে ভয়াবহ অবস্থা ধারণ করবে। এ সময় সংক্রমণ এড়াতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহবান জানান তিনি।
নীলফামারীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুরাদ হাসান বেগ বলেন, মানুষের সচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন ধরণের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। সপ্তাহের প্রতিদিন জনসচেতনতা বাড়াতে মাইকিং, মাস্ক বিতরণ বিভিন্ন প্রচারণা চালানো হচ্ছে। পাপাশি স্বাস্থ্যবিধি অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদলতের মাধ্যমে জেলা জরিমানা করা হচ্ছে।
তিনি জানান, রোববার ও সোমবার জেলায় মোট ১৪টি ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। দুইদিনে মোট ৯৫টি মামলায় ৯২ জনের কাছ থেকে ৮০ হাজার ৯০০ টাকা জরিমান আদায় এবং তিনজনকে বিভিন্ন মেয়াদে বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান চলমান থাকবে।