উচ্চশিক্ষায় আমেরিকায় গিয়ে ছোট ছোট কাপড়-চোপড় পরিধান করায় এবং সেখানে এক হিন্দু ছেলেকে বিয়ে করার অভিযোগ তুলে এক শিক্ষার্থীর পরিবারকে স্থানীয় মসজিদ কমিটি সমাজচ্যুত করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের ঝর্ণা চৌধুরী নামে এক শিক্ষার্থীর পরিবারের সাথে এই ঘটনা ঘটেছে।
এ বিষয়ে ঝর্ণার বাবা আব্দুল হাই চৌধুরী সোমবার (৩১ জানুয়ারি) কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগে আব্দুল হাই চৌধুরী উল্লেখ করেন, ঝর্ণা ২০০৮ সাল থেকে নারী অধিকারসহ বিভিন্ন সামাজিক কাজে যুক্ত ছিলেন। একটি সামাজিক সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কও ছিলেন তিনি। এ কারণে এলাকার কিছু মানুষের বিরাগভাজন হন ঝর্ণা।
আমেরিকায় অবস্থানরত ঝর্ণার ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে এলাকায় নানা অপবাদ প্রচার করে একটি গোষ্ঠি। বলা হয়, ঝর্ণা নাস্তিক হয়ে গেছেন ও সেখানে গিয়ে ছোট ছোট কাপড়-চোপড় পরেছেন এবং এক হিন্দু ছেলেকে বিয়ে করেছেন।
এরপর স্থানীয় মসজিদ কমিটি সভা ডেকে আব্দুল হাইয়ের পরিবারকে সমাজচ্যুত করার ঘোষণা দেয়। এ ঘটনায় সামাজিকভাবে চাপে আছেন বলে জানান তিনি।
এর আগে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝর্ণার নামে কুৎসা রটান কিছু লোক। এ ঘটনায় শাহপরাণ থানায় জিডিও করেছিলেন ঝর্ণা। পরে গত ২৬ ডিসেম্বর উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকা চলে যান তিনি।
এ বিষয়ে ঝর্ণা বলেন, গত ২৬ ডিসেম্বর আমি উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকায় আসি। ২৭ ডিসেম্বর থেকে স্থানীয় একটি মৌলবাদী গোষ্ঠি ফেসবুকে আমাকে নিয়ে কুৎসা রটাতে থাকে।
পরদিন শুক্রবার স্থানীয় ভাটেরা বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ পঞ্চায়েত কমিটি আমার বাবা আব্দুল হাইকে সালিশে ডাকেন। গুরুতর অসুস্থ থাকায় বাবা যেতে না পারায় ক্ষিপ্ত হয়ে মসজিদ পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি মাখন মিয়া ও সম্পাদক আমিন মিয়ার নির্দেশে আমার পরিবারকে সমাজচ্যুত করে দেয়া হয়।
বিষয়টি জানতে পঞ্চায়েত কমিটির সম্পাদক আমিন মিয়ার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি সমাজচ্যুতের বিষয়টি অস্বীকার
করেন।
এ ব্যাপারে ইউএনও এটিএম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, একটি অভিযোগ পেয়েছি। সামাজিকভাবে তাদেরকে যেন কোনো ধরনের হয়রানি না করা হয়, তার জন্য আমি কমিটিকে সতর্ক করে দিয়েছি।
সেই সঙ্গে আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি উভয় পক্ষকে অফিসে আসতে বলেছি। ঝর্ণার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্থানীয় থানাকেও অবগত করা হয়েছে বলে জানান ইউএনও।