মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন
মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের একবছর পূর্তিতে দেশটির প্রধান বিচারপতিসহ অন্য কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডা।
সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব বিভাগ মিয়ানমার জান্তা সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল থিদা ও, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানসহ মোট ৭ ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞার কথা জানায়।
যুক্তরাষ্ট্রের মতো একইভাবে বিচারবিভাগীয় তিন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কানাডা।
যুক্তরাজ্যও মিয়ানমারের অ্যাটর্নি জেনারেল, দুর্নীতি বিষয়ক কমিশনের চেয়ারম্যান ও জান্তার নিয়োগ দেওয়া নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে।
মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির বিরুদ্ধে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বিচারকাজের সঙ্গে তারা গভীরভাবে জড়িত বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
নিষেধাজ্ঞার ফলে কালোতালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সম্পদ জব্দ হবে এবং আমেরিকানদের সঙ্গে তাদের লেনদেনের সুযোগ বন্ধ হলো।
গত বছর ১ ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের পর জান্তা প্রধান মিন অং হ্লায়িং ও তার সরকারের অন্য সদস্যদের ওপর এই তিন দেশের নিষেধাজ্ঞা ছিল। এবার নতুন করে জান্তার কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠানের ওপর সমন্বিত নিষেধাজ্ঞা জারি করল তারা।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেছেন, এটি মিয়ানমারের জনগণের প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থনের বহিঃপ্রকাশ। যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে তার চলমান কাজ চালিয়ে যাবে।
নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে ব্লিনকেন আরও বলেছেন, সমন্বিত এই পদক্ষেপ মিয়ানমার সরকারের সংঘটিত অভ্যুত্থান ও সহিংসতার জন্য জবাবদিহি আরও বাড়াবে।
এদিকে মঙ্গলবার জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক মুখপাত্র রবিনা শামদাসানি বলেন, ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে মিয়ানমারের কারাগারে আট হাজার ৭৯২ জনসহ বেআইনিভাবে আটক হয়েছে অন্তত ১১ হাজার ৭৮৭ জন।
সামরিক অভ্যুত্থানের এক বছরেও শান্তি ফেরেনি মিয়ানমারে। ২০২১ সালের এক ফেব্রুয়ারি দেশটির নির্বাচিত নেত্রী অং সান সু চিকে গৃহবন্দি করে ক্ষমতা দখলে নেয় সেনাবাহিনী। অভ্যুত্থানের পর জান্তাবিরোধী আন্দোলন হলেও সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নে চড়া মূল্য দিতে হয়েছে বিক্ষোভকারীদের। সেনা অভ্যুত্থানের এক বছরের মাথায় দেশটির প্রধান বিচারপতি ও দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধানসহ ৮ ব্যক্তি ও দুই প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ব্রিটেন।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) বলছে, সামরিক অভ্যুত্থানের পর গত এক বছরে মিয়ানমারে চাকরি হারিয়েছেন ১৬ লাখ মানুষ। চলমান সশস্ত্র সংঘাত, সহিংসতা ও অনিরাপত্তার কারণে সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে গ্রামীণ কৃষকের ওপর। দেশটিতে বেড়েছে বাস্তুচ্যুতের সংখ্যা, কমেছে জীবিকা।