সাভারে চালকের বাগবিতণ্ডায় অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে ছটফট করতে করতে প্রাণ হারাল ৯ বছরের এক শিশু। ব্যস্ত মহাসড়কে শত শত মানুষের চলাচল থাকলেও অসহায় পরিবারটিকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি কেউ।
মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর মহাসড়কে এ ঘটনা ঘটে।
রাজধানীর মহাখালীর ক্যান্সার হাসপাতাল থেকে দুপুরে শিশু আফসানাকে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সটি গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধায় ফিরছিল। পথে আশুলিয়ার-বাইপাইলে ওভারটেকিংয়ের তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে অ্যাম্বুলেন্সের চালককে মারধর করেন একটি মাইক্রোবাসের চালক।
এক পর্যায়ে অ্যাম্বুলেন্সের চাবিটিও ছিনিয়ে নেন তিনি। পরিবারের সবাই অনুনয়-বিনয় করে অসুস্থ শিশুর কথা বলছিল বারবার। তবু মাইক্রোবাসের চালকের মন গলেনি।
উল্টো তার আরো কয়েকজন সহযোগীকে ফোনে ডেকে এনে অ্যাম্বুলেন্সের চালককে মারধর করতে থাকেন। ততক্ষণে ছটফট করতে করতে বাবার কোলেই মৃত্যু হয় শিশু আফসানার।
নিহত শিশু আফসানা আক্তার গাইবান্ধা জেলার সদর থানার মধ্য ধানগড়ার সাপলামিল এলাকার আলম মিয়ার মেয়ে। প্রায় চার মাস ধরে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল সে।
সেখান থেকে ঢাকার মহাখালী ক্যান্সার হাসপাতালে স্থানান্তর করলে আফসানাকে নিয়ে ঢাকায় আসে পরিবার। ডাক্তার দেখিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে করে গ্রামের বাড়ি ফিরছিলেন তারা।
খবর পেয়ে পাশে থাকা ট্রাফিক পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে এসে অ্যাম্বুলেন্সের চাবি সংগ্রহ করলেও অভিযুক্ত মাইক্রোবাসের চালকসহ অন্যরা পালিয়ে যায়। তবে জব্দ করা হয় মাইক্রোবাসটি।
দীর্ঘ সময় পর অ্যাম্বুলেন্সের চাবি পেয়ে পাশের নারী ও শিশু হাসপাতালে শিশুর নিথর দেহ নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক নিশ্চিত করেন, হাসপাতালে আসার আগেই শিশু আফসানার মৃত্যু হয়েছে।
নিহত শিশুর বাবা আলম মিয়া বলেন, ‘আমার মেয়ে ক্যান্সারের রোগী। রংপুর থেকে মহাখালীতে ডাক্তার দেখিয়ে এম্বুলেন্সে করে বাড়ি ফিরছিলাম। সাইড না দেয়ায় মাইক্রোবাসের লোকজন অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভারকে মারধর শুরু করে। চাবি নিয়ে যায় তারা। দীর্ঘ সময় অনুরোধ করেও চাবি ফেরত পাইনি। একসময় আমার মেয়ে অ্যাম্বুলেন্সেই মারা গেল।’
প্রত্যক্ষদর্শী পারভেজ বলেন, ‘ঘটনার সময় অনেকেই দাঁড়িয়ে ছিল। অনেকেই বলেছে চাবি ফেরত দিতে। কিন্তু তারা দেয়নি। এটার বিচার হওয়ার দরকার। মাইক্রোবাস চালকের কারণেই শিশুটির করুণ মৃত্যু হয়েছে।’
পুলিশ জানায়, এর আগে টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কের নরসিংহপুর বাসস্ট্যান্ডে সাইড দেওয়া না দেওয়া নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পরে অ্যাম্বুলেন্স ও মাইক্রোবাসের চালক।
সেই সূত্র ধরে বাইপাইলে অ্যাম্বুলেন্সটির গতিরোধ করে মাইক্রোবাসটি। মাইক্রোবাসের চালকের পরিচয় পাওয়া গেছে। তার নাম নজরুল ইসলাম। তিনি আশুলিয়ার বাইপাইলে আব্দুল মজিদের মালিকানাধীন মাইক্রোবাসটি রেন্ট-এ-কারের চালক। তার সঙ্গে থাকা অন্যদের নামও প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
আশুলিয়া থানার এসআই সামিউল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে স্থানীয় নারী ও শিশু হাসপাতাল থেকে নিহত শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রক্রিয়া শেষে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে পরামর্শ করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া অভিযুক্ত চালকসহ সকলের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।