ভারতীয় প্রতিষ্ঠান স্যান্ডরের কাছে জিম্মি দেশের ডায়ালাইসিস রোগীরা
কর্তৃপক্ষের যথাযথ নজরদারির অভাবে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান স্যান্ডরের কাছে বিভিন্ন সময় জিম্মি হতে হচ্ছে ডায়ালাইসিসের রোগীদের। এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আর সক্ষমতা থাকলেও অতীতের বিভিন্ন সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেওয়ায় বেসরকারি খাতনির্ভরতা থেকে এখনো বের হতে পারছে না ডায়ালাইসিস সেবা। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় দেশের সব মেডিকেল কলেজ ও জেলা হাসপাতালে কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার স্থাপনের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তাতে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত সরকারিভাবে ও কম খরচে সাধারণ মানুষ এ সেবা পাবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।
প্রাণঘাতী ব্যাধি কিডনি রোগে প্রতিনিয়তই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। এক জরিপের ফল বলছে, দেশে দুই কোটি মানুষ কোনো-না-কোনোভাবে ভুগছেন কিডনি রোগে। আর আক্রান্তদের মধ্যে প্রতিবছর ৪০ হাজারের বেশি কিডনি পুরোপুরি অকেজো হচ্ছে।
ব্যয়বহুল এ রোগের দুটি চিকিৎসা পদ্ধতির অন্যতম ডায়ালাইসিস বা যন্ত্রের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে কিডনির কাজ করানো। অনেক বেসরকারি হাসপাতালে প্রতিবার ডায়ালাইসিস করাতে খরচ পড়ে যায় ৪ থেকে ৯ হাজার টাকা।
২০১৬ সালে প্রথম সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব বা পিপিই উদ্যোগে চালু করা হয় ডায়ালাইসিস সেবা। যেখানে বর্তমানে ৫০০ টাকায় সম্ভব হচ্ছে অসহায় গরিব রোগীদের এ সেবা দেওয়া। তবে এখানেও অনেকটা জিম্মি অংশীদার ভারতীয় প্রতিষ্ঠান স্যান্ডরের কাছে। মাঝে মাঝেই নানা অজুহাতে প্রতিষ্ঠানটি সেবা বন্ধ করে দেওয়ায় রোগীদের পড়তে হচ্ছে বিপাকে।
বাংলাদেশ রেনাল অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ডা. কেবিএম হাদিউজ্জামান বলেন, কর্তৃপক্ষের যথাযথ নজরদারির অভাবের কারণেই স্যান্ডরের কাছে জিম্মি হতে হচ্ছে রোগীদের। আর সক্ষমতা থাকলেও অতীতের বিভিন্ন সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণেই ডায়ালাইসিস সেবা এখনো বের হতে পারছে না বেসরকারি খাতনির্ভরতা থেকে।
তিনি বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল স্যান্ডর যদি এটিকে প্রোভাইড করতে না পারে, সেটিকে যে কোনোভাবে মানুষের সার্ভিসটা চালিয়ে নেওয়া, জরুরি সার্ভিস হিসেবে মানুষের কাছে এটি গ্রহণযোগ্য যে এটা জরুরি সার্ভিস, চালিয়ে নিয়ে যেতে হবে, এখানে কোনো গাফিলতি করা যাবে না।
তবে দেশের সব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫০ শয্যা ও জেলা হাসপাতালে ১০ শয্যার কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ২০২০ সালে একনেকে অনুমোদন পায় এ-সংক্রান্ত ২৫৫ কোটি টাকার প্রকল্প। এটি বাস্তবায়ন হলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে একেবারে প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত সরকারিভাবে ও সাশ্রয়ী খরচে সাধারণ মানুষ কিডনি ডায়ালাইসিস সেবা পাবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।
কিডনি রোগের চিকিৎসা ব্যয়বহুল হওয়ায় প্রতিরোধে সাধারণ মানুষকে বেশি নজর দেওয়ার তাগিদ বিশেষজ্ঞদের।