দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের জার্মানি দখলের কথা কারোই অজানা নয়। সে সময় এক প্রকার ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিলেন নাৎসিরা। লুটপাট থেকে শুরু করে হত্যা কিছুই যেন বাদ ছিল না। তাদের লুট করা বিশাল ধন সম্পদের কুঠুরি পরবর্তীতে খোঁজ মিলেছিল একটি অব্যবহৃত খনির গুহায়। খনিতে দীর্ঘ দিন খননকাজ বন্ধ। সেই অব্যবহৃত খনির একটি গোপন কুঠুরিতে রাখা ছিল রাশি রাশি সোনাদানা, গয়নাগাঁটি। বস্তায় ভরা নোটের বান্ডিল।
মূল্যবান শিল্পকর্ম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে খুঁজে পাওয়া সেই ধনসম্পত্তির আর্থিক মূল্য চোখ কপালে তোলার মতো।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের জার্মানি দখলের পর সে দেশের দিকে পা বাড়িয়েছিল আমেরিকার থার্ড আর্মি। মের্কের্স-কাইজেলবাখ শহরে ঢুকে পড়েছিল তারা। হঠাৎই গোপন সূত্রে খবর এল, শহরের কাছে একটি অব্যবহৃত লবণের খনিতে থরে থরে বিশাল স্বর্ণ-গয়না, ডলার লুকিয়ে রেখেছে জার্মান সেনা। সঙ্গে সঙ্গে সে খবর পৌঁছেছিল আমেরিকার সেনার উপরমহলে। কিছু দিনের মধ্যে থার্ড আর্মির জেনারেল আইজেনহাওয়ার এবং জেনারেল প্যাটন পৌঁছে যান ওই খনিতে। লুটের কোটি কোটি ডলারের বেশির ভাগই যুদ্ধের অস্ত্রশস্ত্র কেনায় খরচ করেছিল নাৎসিরা। তা সত্ত্বেও সম্পত্তি ফুরোয়নি।
বিপুল সম্পত্তি লুকিয়ে রাখার জন্য মের্কের্সের লবণ এবং পটাসিয়াম খনিগুলিকেই সুরক্ষিত বলে মনে হয়েছিল জার্মান সেনার। বার্লিন থেকে প্রায় দু’শো মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে ওই খনি ভিতরে আগে থেকেই যুদ্ধের অস্ত্রশস্ত্র তৈরি করত সেনা। কারণ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বোমাবর্ষণে তত দিনে খনির উপরের কারখানা ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছে। তাতে ছিল এক হাজার বস্তায় ভরা ১০০ কোটি রাইখসমার্ক। সঙ্গে ছিল বিপুল পরিমাণ বিদেশি মুদ্রাও। ছিল হিরের গয়না, সোনা-রুপোর কয়েন, বাঁট এবং গয়নাগাটি, সোনার বাক্সও। সপ্তাহখানেকের মধ্যে মের্কের্সে হানা দেয় থার্ড আর্মি। মের্কের্সের সম্পত্তির খবর পেয়ে খনির পাঁচটি প্রবেশপথে রক্ষী মোতায়েন করে তারা। ৭ এপ্রিল থার্ড আর্মির লেফেটেন্যান্ট কর্নেল উইলিয়াম এ রাসেলের নেতৃত্বে সেনা ঢোকে মের্কের্সের খনিতে। সঙ্গে ছিলেন চিত্রগ্রাহকরাও।
আরও পড়ুন: গ্রামের পুরনো বাড়ির ‘ঐতিহ্য’ সিন্দুক
খনির ভিতরে চলমান সিঁড়ি দিয়ে নামতেই আমেরিকার সেনানিদের চক্ষু চড়কগাছ! খনির ভিতরের প্রধান পথে রাখা ছিল ৫৫০টি বস্তাবোঝাই রাইখসমার্কের বান্ডিল। তবে আসল সম্পত্তি ছিল একটি গোপন কুঠুরিতে! গোপন কুঠুরিটি তিন ফুট দীর্ঘ ইটের দেওয়াল দিয়ে ঢাকা ছিল। দেওয়ালের মাঝে ছিল একটি স্টিলের দরজা। তাতে ব্যাঙ্কের ভল্টের কায়দায় বিরাট বড় তালা। কম্বিনেশন লকের নম্বর এবং সঠিক টাইমিং না থাকলে যে তালা খুলবে না। ডিনামাইট দিয়ে ওই দেওয়াল উড়িয়ে দরজা পর্যন্ত পৌঁছেছিল থার্ড আর্মি। দেড়শো ফুট লম্বা এবং ৭৫ ফুট চওড়া গোপন কুঠুরির ছাদ ছিল ১২ ফুট উঁচুতে।
কুঠুরির মধ্যে রাখা ছিল সোনার কয়েন এবং বাঁটবোঝাই সাত হাজার বস্তা। ৫৫টি বিশেষ বাক্সে বন্দি ছিল প্রচুর সোনার বাট। সঙ্গে আরও শত শত সোনার সামগ্রী। সোনার রাইখসমার্ক নোটই ছিল এক হাজার ৩০০ বস্তার বেশি। ওই একই সংখ্যক রাইখসমার্কও মিলেছিল। ছিল ৭১১টি বস্তায় ভরা সোনার ডলার। বস্তা বস্তা সোনার পাউন্ড, ফ্রাঁ-এর নোট। সঙ্গে দু’হাজারেরও বেশি ব্যাগে ভরা বহু দেশের মুদ্রা। পাশাপাশি, ৪০০ টন শিল্পসামগ্রীও উদ্ধার হয়েছিল। সব মিলিয়ে ওই ছোট্ট কুঠুরি থেকে ৫২ কোটি ডলারেরও বেশি সম্পত্তি উদ্ধার করেছিল থার্ড আর্মি! সেই সময়ের নিরিখে যা বিপুল পরিমাণ অর্থ।