আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় দ্রুত বদলে যাচ্ছে বিশ্ব। বদলে যাচ্ছে মানুষের রুচি ও চিন্তা। উন্নত বিশ্বের বড় বড় কোম্পানি, হোটেল, রেস্তোরাঁ এবং অন্যান্য পরিষেবা খাতে এরইমধ্যে মানুষের পরিবর্তে রোবটের ব্যবহার বেড়েছে। কিন্তু রোবট পছন্দের ক্ষেত্রেও বদলে গেছে মানুষের চিন্তা। নতুন এক গবেষণায় জানা গেছে, নারীদের বৈশিষ্ট্য বহন করে এমন রোবটদের সাথে কথা বলতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন অধিকাংশ মানুষ।
রোবট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পুলম্যানের ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটির বিশেষজ্ঞরা এক গবেষণায় একাধিক নতুন তথ্য পেয়েছেন। যা সত্যিই অবাক করার মতো। ১৭০ জন নারী-পুরুষ স্বেচ্ছাসেবকের ওপর এ গবেষণা চালিয়েছেন স্টেট ইউনিভার্সিটির বিশেষজ্ঞরা।
গবেষণায় স্বেচ্ছাসেবকদের একটি কাল্পনিক হোটেলের কথা ভাবতে বলা হয় এবং সেখানে তারা কেমন রোবট চান তা জানতে চাওয়া হয়।
একাধিক পরীক্ষার মাধ্যমে গবেষক দলটি আবিষ্কার করেন যে, নারীদের কাছাকাছি বৈশিষ্ট্য বহন করে এমন রোবটের সাথে কথা বলতে বা সময় কাটাতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন অধিকাংশ স্বেচ্ছাসেবক।
গবেষকরা বলেছেন ভবিষ্যতে নারীদের মতো মুখের পাশাপাশি, তাদের মতো বৈশিষ্ট্য থাকা রোবটদের গুরুত্ব বাড়বে। যেসব কোম্পানি হোটেল, রেস্তোরাঁ এবং অন্যান্য পরিষেবা শিল্পপ্রতিষ্ঠান মানব কর্মীদের প্রতিস্থাপন করতে চাইছে, সেক্ষেত্রে তারা নারী বৈশিষ্ট্যের রোবট বিবেচনা করলে তা আরও দ্রুত গ্রহণ করবে ক্রেতারা।
গবেষক সুবিন সিও ডেইলি মেইলকে বলেন, লিঙ্গ স্টিরিওটাইপিংয়ের কারণে নারীদের মধ্যে যত্ন নেওয়ার বৈশিষ্ট্য আছে, তাই নারী রোবটের ক্ষেত্রে মানুষের স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করার প্রবণতা তৈরি হয়।
প্রফেসর সিও আরও বলেন, কিছু হোটেল রুম পরিষ্কারসহ বিভিন্ন কাজের জন্য রোবটের দিকে ঝুঁকছে। এরইমধ্যে লাস ভেগাসের ম্যান্ডারিন ওরিয়েন্টাল হোটেলে ‘পিপার’ নামের এক নারী রোবট থেকে শুরু করে চীনের সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় ফ্লাইজু হোটেল চেইন পর্যন্ত, সবখানে অতিথিরা রোবট এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) মুখোমুখি হচ্ছেন। ফলে এর ব্যবহার আরও বাড়বে।
উদাহরণ হিসেবে সিও উল্লেখ করেন, যুক্তরাজ্যে একটি চীনা বুফে চেইন করোনভাইরাস মহামারীর কারণে প্রায় ২০ হাজার ডলার মূল্যের অর্থাৎ ৮০ হাজার ডলারে চারটি ‘বেলাবট’ কিনেছে। এবং সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, একটি বটের গড় মূল্য একজন পূর্ণকালীন কর্মচারীর বেতনের চেয়ে কম। ফলে এটি লাভজনক।
গবেষকরা স্বেচ্ছাসেবকদের সামনে ‘অ্যালেক্স’ নামক একটি পুরুষ আকৃতির রোবট ও ‘সারা’ নামের একটি নারী আকৃতির রোবট হাজির করেন। রোবট দুইটি একই কাজ করতে পারে। শুধুমাত্র আলাদা করে তাদের নারী ও পুরুষের আকৃতি দেওয়া হয়। যারা মানুষকে অভ্যর্থনা জানানোর কাজ করতে সক্ষম।
স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে যাদেরকে নারী রোবট দেখানো হয়েছিল তারা পুরুষ রোবটদের তুলনায় নারী রোবটের সাথে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন বলে জানান।
যদিও এ বিষয়ে প্রফেসর সিও কিছুটা সতর্ক করে বলেন, এআই বা রোবটের ক্ষেত্রে লিঙ্গের বিষয়টি নানা সমস্যা উত্থাপন করে, এ নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।
উল্লেখ্য, পশ্চিমা বিশ্বের একাধিক দেশে এরইমধ্যে বেড়েছে রোবটের ব্যবহার। একাধিক বড় প্রতিষ্ঠান তাদের কাজের একটা বড় অংশ সম্পন্ন করতে ধীরে ধীরে রোবট বা এআই প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকছে। ফলে ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটির এ গবেষণা তাদের নতুন দিক নির্দেশনা দিতে পারে।