ডিপ্রেশন’–যার পরতে পরতে জড়িয়ে থাকে মনখারাপ আর ভালো না লাগার এক গভীর দ্যোতনা। শব্দটি খুব ছোট হলেও এই শক্তিশালী প্রাণঘাতী বিষাক্ত কীট নিঃশব্দে কেড়ে নিচ্ছে অনেক মানুষের প্রাণ। মন খারাপের গভীরতা, কোনো ভাবনা নিয়ে অস্থিরতা কিংবা ট্রমা–এই সবকিছু থেকে যখন কোনোভাবেই একা বের হওয়া যায় না, নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে, তখনই ব্যাপারটি উপনীত হয় দুঃখ ও বিষাদমাখা ডিপ্রেশন বা অবসাদ নামক সর্বনাশা রোগটিতে এসে।
তবে বর্তমান তরুণ প্রজন্মের মধ্যে কিছু বুঝে কিংবা না বুঝেই এই শব্দটি ব্যবহারের উদাহরণও কম নয়! মানব মনের একটি জটিল স্তরে গিয়ে মানুষ এই ডিপ্রেশনের শিকার হয়। রিডার্স ডাইজেস্ট অনুযায়ী, কেউ ডিপ্রেশনে ভুগছে কি না, তা জানার কিছু লক্ষণও রয়েছে।
সাদা-কালোর মাঝে এক ধূসর এলাকায় আটকে পড়ে থাকে ডিপ্রেসড মানুষের মন, বর্তমান সামগ্রিক পরিস্থিতি এবং তারা নিজে। এদিকে তারা ভালো আছে কি না, তা কখনোই সত্যি করে বলতে পারে না! হয়তো নিজেরাই খুঁজে পায় না সেই ভালো থাকা বা না থাকার উত্তরটি। কেউ যখন জিজ্ঞেস করে, ‘কেমন আছেন?’ প্রশ্নটির উত্তর দিতে গিয়ে যেন ভাবনায় পড়ে যায়। প্রত্যুত্তরে, ‘এই তো আছি’ কিংবা ‘ভালো আছি’। অনেকটাই যেন জোর করে বলা।
এ ছাড়া দমিয়ে রাখা অনুভূতিগুলোর সঙ্গে এঁটে উঠতে না পারা মানুষটি বেছে নেয় নিজেকে প্রচণ্ড ব্যস্ত রাখার পথটি। ব্যস্ততার কঠিন চাপে তার অনুভূতিগুলো যেন আরও চাপা পড়ে যায় স্বেচ্ছাক্লান্তির অতল গহ্বরে। চারপাশে আনন্দের পরিবেশ থাকলেও একাকিত্ব একটা সময় তাকে গ্রাস করে নেয়।
এদিকে সমস্যাকে চেপে রাখার ফলে মস্তিষ্কের অবস্থা এমন হয় যে, ভালো করে কিছু চিন্তায়ও আসে না। এ সময় মানুষ প্রচণ্ড সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে। নিজেকে ভাবনার জগতে হারিয়ে ফেলা, অবিন্যস্ত কথোপকথন, কথা খুঁজে না পাওয়া, অল্পতেই আবেগী হয়ে যাওয়া, কিংবা খুব সামান্য কিছুতে বেশি হেসে ফেলাও ডিপ্রেশনের লক্ষণ।
তা ছাড়া নিজের পছন্দের কাজগুলো এবং সৃজনশীলতার সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো কাজ ধীরে ধীরে কমিয়ে দেওয়া অথবা একটা সময় আর না করা ডিপ্রেশনের একটি মারাত্মক দিক! কাজগুলো চলছে হয়তো, তবু কোথাও যেন রয়ে যায় ছন্দপতন!
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) নিয়মানুযায়ী, অবসন্ন মন (‘লো মুড’), শক্তিহীনতা (‘লো এনার্জি’) এবং উৎসাহহীনতা (‘লো ইন্টারেস্ট’)-কে ডিপ্রেশনের আওতায় ফেলা হয়েছে। আরেকটু গভীরে গিয়ে, বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী ‘অ্যারন বেক’-এর তত্ত্বানুযায়ী, নিজের, পরিবেশের এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণার সম্মিলিত প্রকাশই হলো ডিপ্রেশন। অবশ্য, শুধু নেতিবাচক ধারণা থাকলেই চলবে না, রোজকার জীবনে তার প্রভাবও পড়ে। বইয়ের ভাষায় যাকে বলে ‘Significant Socio-occupational impairment’।
বর্তমান আধুনিক যান্ত্রিক জগতে এমন মানসিক অবস্থার মুখে অজান্তেই লাখো মানুষ ধাবিত হচ্ছে।এমন অনেকেই আছেন, যারা বছরের পর বছর এ সমস্যা নিয়ে জীবন কাটাচ্ছে। কিন্তু জটিল পর্যায়ে চলে যাওয়ার ফলে সেরে ওঠা আর হচ্ছে না। তাই হেলাফেলা নয়, শুধু দরকার সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ!