শুধু নতুন ঢাকাকেন্দ্রিক নয়, রাজধানীর গোড়া পত্তনের আঁতুড়ঘর পুরান ঢাকাকেও উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সমান গুরুত্ব দিতে হবে। সংরক্ষণ করতে হবে পুরান ঢাকার ইতিহাস-ঐতিহ্য।
শনিবার, রাজধানীতে আয়োজিত এক সেমিনারে এমনটাই তুলে ধরলেন নগরবিদ ও বিশিষ্ট জনেরা। বললেন ঐহিত্য সংরক্ষণ করে পুরান ঢাকায় পরিকল্পিত নগরায়ন জরুরি।
নতুন ঢাকা নাকি পুরনো ঢাকা? এমন প্রশ্নে পুরনো ঢাকাকেই বেছে নিয়েছিলেন আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রধান কবি শামসুর রাহমান। বলেছিলেন নতুন ঢাকা জৌলুসপূর্ণ। কিন্তু পুরনো ঢাকা ইতিহাস-ঐতিহ্যময়।
আহসান মঞ্জিল, লালবাগ কেল্লা, বড় ও ছোট কাটরা, চকবাজার, বেগমবাজার, ঢাকেশ্বরী মন্দির, শাঁখারি বাজার, বুড়িগঙ্গা পাড়ের সদরঘাট। পুরান ঢাকার প্রতিটা অলিগলিই ইতিহাসের একেকটা অধ্যায়।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় ঢাকার অনেক কিছুই বদলে গেছে। কিন্তু পুরান ঢাকা খুব একটা বদলায়নি। উন্নয়নের ছোঁয়াও তেমন একটা লাগেনি। উল্টো সংরক্ষণের অভাবে ঐহিত্যবাহী অনেক স্থাপনাই এখন হুমকির মুখে।
এমন প্রেক্ষাপটে ঐহিত্য সংরক্ষণ করে পুরান ঢাকার উন্নয়ন ভাবনা নিয়ে ঢাকা ইউটিলিটি রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন আয়োজন করে এক সেমিনার।
এতে অংশ নিয়ে নগর পরিকল্পনাবিদরা বললেন, ত্রুটিপূর্ণ তালিকার কারণে পুরান ঢাকার ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না।
তারা বলেন, পুরান ঢাকাকে এড়িয়ে কোনো উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই একদিকে যেমন এর ঐতিহ্য রক্ষা করতে হবে, ঠিক তেমনি ঐতিহ্য ধরে রেখে উন্নয়ন কাজ চালু রাখা প্রয়োজন।
ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় বুড়িগঙ্গাকে ঘিরে সাংস্কৃতিক বলয় গড়ার পাশাপাশি রাস্তা বড় করা, খোলা জায়গা রাখা ও ব্লকভিত্তিক বহুতল ভবন নির্মাণের মাধ্যমে পরিকল্পিত নগর গড়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। তবে জটিলতাও আছে।
সেমিনারে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ইতিহাসের বিবর্তনে পুরান ঢাকার অনেক ঐতিহ্য হুমকির মুখে। এগুলো রক্ষায় রাষ্ট্রীয় প্রণোদনা দরকার।
আর, আরবান স্টাডি গ্রুপের প্রধান নির্বাহী তাইমুর ইসলাম বলেন, একদিকে ঐতিহ্যের কথা বলা হচ্ছে, অন্যদিকে জরাজীর্ণ ভবনের কথা বলা হচ্ছে। জরাজীর্ণ ভবনের কথা বলে করোনার সময় অনেক ভবন ভেঙে ফেলা হয়েছে।
তিনি জানান, ২০০৯ সালের সরকারি তালিকা অনুযায়ী পুরান ঢাকায় ঐতিহ্যবাহী ভবন ৯৪টি। আবার ২০১৭ সালের তালিকা অনুযায়ী ৭৫টি, কিন্তু ভবন রয়েছে এক হাজার ৮৩১টি। তাই সেই তালিকা ঠিক করা উচিত।
ভবন না ভেঙেও সংরক্ষণ করা যায় জানিয়ে তাইমুর বলেন, রাজউক তার মতো ভাবছে, সিটি করপোরেশন তার মতো ভাবছে এবং প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ তার মতো ভাবছে। প্যারিস, লন্ডনের মতো অনেক শহর আছে যেখানে আধুনিকতার সব আছে পুরাতন কাঠামোকে রেখে।
সেমিনারে ঐতিহ্য বিশেষজ্ঞ স্থপতি মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, শুধু ভবন নয়, পুরান ঢাকার সংকীর্ণ রাস্তাও তার ঐতিহ্য। সব সময় রাস্তা ভেঙে বড় করতে হবে, বিষয়টা এমন নয়।
সেখানে ফায়ার সার্ভিস বা অ্যাম্বুলেন্স প্রবেশ করতে পারবে না, তা না। সেসব গাড়ি প্রবেশের জন্য কাস্টমাইজড যানবাহনের বিষয়ও ভাবার প্রয়োজন আছে বলেও মনে করেন তিনি।
সেই সঙ্গে বুড়িগঙ্গা নদী, পুরান ঢাকার বিভিন্ন খাল ও ঐতিহাসিক সড়ক রক্ষার তাগিদও দেন নগরবিদরা। তাদের চাওয়া, উন্নয়ন যাত্রায় নতুন ঢাকার মতোই সমান গুরুত্ব পাক পুরনো ঢাকা।