হারিয়ে যাওয়া শিশু কিংবা যেকোনো বয়সী মানুষকে খুঁজে পেতে এখন আর অপেক্ষার প্রহর গুনতে হবে না পোস্টার, মাইকিং কিংবা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে।
এবার একটি অ্যাপ অল্প সময়েই সন্ধান দেবে হারিয়ে যাওয়া মানুষের। ফেস রিকগনিশন প্রযুক্তির মাধ্যমে নির্ভুলভাবে কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তির অনুসন্ধান করতে সক্ষম এ অ্যাপটির নাম রাখা হয়েছে ‘নিখোঁজ’। এর নির্মাতারা বলছেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের সমর্থন ও সহযোগিতা পেলে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে নিখোঁজ মানুষের সন্ধানে।
বয়সটা বাবা-মায়ের ভালোবাসা, আদর আর মমতায় বেড়ে ওঠার। অথচ জীবনের শুরুতেই কঠিন বাস্তবতার শিকার ১০ বছর বয়সী শিশু রনির। একদিন বিকেলবেলা। কিছু একটা নিয়ে মায়ের সঙ্গে অভিমান। ঘুমের ভান করে সবার অলক্ষে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পড়া। অভিমানী রনি এরপর হাঁটতে হাঁটতে কখন-যে চেনা গণ্ডি পার করে ফেলে নিজেও জানে না। এরপর ঠিক কতটা রাত কিংবা দিন পেরিয়েছে, নেই সেই হিসাবও। শুধু মনে আছে বাবা-মা এবং বোনের নাম।
হারিয়ে গিয়ে অন্য সবার মতোই পথশিশু তকমা পেলেও রনির ভাগ্য এ ক্ষেত্রে কিছুটা প্রসন্ন। পথশিশুদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা লিডো রনিকে রাস্তা থেকে তুলে আনে ঢাকার কেরানীগঞ্জে নিজেদের একটি শেল্টারে। যেখানে আছে হারিয়ে যাওয়া এমন আরও শিশু।
লিডোর সিনিয়র সোশ্যাল মোবিলাইজার নাজিরুল ইসলাম অপু বলেন, ‘হারিয়ে যাওয়া শিশুদের নাম-ঠিকানা দেওয়া থাকলে, এমন প্রযুক্তি থাকলে তাদের পরিবারকে খুঁজে পাওয়া আমাদের জন্য সহজ হতো।’
হারিয়ে যাওয়া মানুষ অনুসন্ধানে প্রচলিত গতানুগতিক পদ্ধতির নানা সীমাবদ্ধতাকে পেছনে ফেলে এবার যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে আসছে নিখোঁজ অ্যাপ। ফেস রিকগনিশন প্রযুক্তির মাধ্যমে কাজ করা অ্যাপটিতে রয়েছে দুটি অপশন। একটি অ্যাড চিলড্রেন অন্যটি ফাইন্ড চিলড্রেন। হরিয়ে যাওয়া বা খুঁজে পাওয়া মানুষের ছবি দিয়ে সার্চ দিলেও অ্যাপটি নির্ভুলভাবে খুঁজে দেবে কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিকে।
নিখোঁজ অ্যাপ+সটের সহ-উদ্যোক্তা মইনুল ইসলাম খান বলেন, ‘এখন আমাদের দরকার সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা। বাংলাদেশের প্রতিটি থানায় যেন আমাদের অ্যাপটা ব্যবহার হয় এবং পাশাপাশি আইসিটি মন্ত্রণালয় থেকে সহযোগিতা দরকার।’
হাসান শাহরিয়ার আরও বলেন, যাদের স্বজন বা শিশু হারিয়ে গিয়েছে, তারা একটি ফেস ব্যবহার করবে, মানে খুঁজবে আর যারা রাস্তায় বা অন্য কোথাও থেকে পেয়েছে, তারা ফিরিয়ে দিতে চাচ্ছে, তারা আরেকটি ফেস ব্যবহার করবে। এখানে মূলত একটা কাজ করতে হবে–উভয়কে ছবি দিতে হবে। ছবি পুরোনো হলেও সমস্যা নেই, ছবি লাগবে।’
প্রযুক্তির এ অগ্রগতিকে সাধুবাদ জানিয়ে পুলিশ বলছে, বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় পুরো প্রক্রিয়ায় যুক্ত রাখতে হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে।
ডিএমপির উপপুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মো. ফারুক হোসেন বলেন, এ অ্যাপটি সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে অনুমোদনপ্রাপ্ত হতে হবে। এ অ্যাপের সহায়তা নিতে হলে অবশ্যই থানায় আগে জিডি করতে হবে।
অভিমানে ঘর পালানো কিংবা হারিয়ে যাওয়া শিশুদের বড় একটি অংশ কোনো-না-কোনোভাবে পৌঁছায় লঞ্চ, বাস কিংবা রেলস্টেশনে। এদের অনেকেই জড়িয়ে পড়ে মাদকসহ অপরাধমূলক নানা কর্মকাণ্ডে। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় এসব শিশুর পরিচয় শনাক্ত করা গেলে দ্রুত পরিবারের কাছে হস্তান্তরের পাশাপাশি বন্ধ হবে শিশুর দুর্বলতার সুযোগ নেওয়া এসব চক্রের দৌরাত্ম্য।