পাকিস্তানের পারমাণবিক প্রযুক্তিতে সক্ষমতা অর্জনে ও পারমাণবিক পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণে চীনের সহায়তা পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তারের ঝুঁকি তৈরি করছে। কানাডাভিত্তিক থিংকট্যাঙ্ক ইন্টারন্যাশনাল ফোরাম ফর রাইটস অ্যান্ড সিকিউরিটি (ইফরাস) এ তথ্য জানিয়েছে।
পাকিস্তান আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) নির্দেশনা মানতে অস্বীকার করায় কানাডা ১৯৭৬ সালে ইসলামাবাদের সঙ্গে পারমাণবিক শক্তি সহযোগিতা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়।
আইএইএর নির্দেশিকার উদ্দেশ্যে হলো, পারমাণবিক অস্ত্রের উদ্দেশ্যে পারমাণবিক কর্মসূচি ব্যবহার না করে আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি মেনে চলা। তবে পাকিস্তান এসব মেনে চলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল।
সেই থেকে চীন দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে তার আঞ্চলিক ভারসাম্য শক্তি কৌশলের অংশ হিসেবে পাকিস্তানের পারমাণবিক সক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে যাচ্ছে। এই পদক্ষেপ পারমাণবিক অস্ত্র সরবরাহ রোধে ‘নিউক্লিয়ার সাপ্লায়ার গ্রুপের’ (এনএসজি) প্রতি চীনের প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করছে। শুধু তাই নয়, এটি পাকিস্তানকে তার ‘অনিরাপদ পারমাণবিক অবকাঠামো’ নির্মাণ ও পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদনে নিয়োজিত করছে।
ইফরাস জানিয়েছে, কানাডা থেকে সাহায্য বন্ধের পর ইসলামাবাদের কর্মসূচির আরও বড়াতে পাকিস্তানের কাছে চীনের সহায়তা পৌঁছাতে খুব বেশি সময় লাগেনি।
থিঙ্ক ট্যাঙ্ক বলছে, পাকিস্তানের বিদ্যুতের ঘাটতি মেটানোর আড়ালে চীন দেশটিকে তার পারমাণবিক শক্তি কর্মসূচি তৈরিতে সহায়তা করছে। ১৯৮৬ সালে সেপ্টেম্বরে, চীন ও পাকিস্তান বেসামরিক পারমাণবিক প্রযুক্তি হস্তান্তরের সুবিধার্থে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে।
১৯৯০ দশকের গোড়ার দিকে চীন পাকিস্তানকে বিভিন্ন পারমাণবিক অস্ত্র সরবরাহ ব্যবস্থা সরবরাহ করেছিল, যেমন- স্বল্প-পরিসরের ডিএফ-১১ (এম-১১) ব্যালিস্টিক মিসাইল। পারমাণবিক টর্পেডোর উন্নয়নের মধ্যে চীনের এই সরবরাহের ফলে পাকিস্তানের নির্ভরযোগ্য পারমাণবিক ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। পরে ১৯৯৮ সালে পারমাণবিক পরীক্ষা চালায় দেশটি।
পাকিস্তানের কাছে পারমাণবিক ব্যবস্থার সরঞ্জাম রপ্তানি করেছিল ‘চীনা প্রেসিশন মেশিনারি ইমপোর্ট-এক্সপোর্ট করপোরেশন’, যেটি রাষ্ট্র মালিকানাধীন অন্যান্য সংস্থাগুলোর পক্ষে বিদেশে ক্ষেপণাস্ত্র বাজারজাত ও বিক্রি করে।
১৯৯৪ থেকে ১৯৯৫ এর মধ্যে চীনের রাষ্ট্র মালিকাধীন আরেকটি প্রতিষ্ঠান ‘চায়না নিউক্লিয়ার এনার্জি ইন্ডাস্ট্রি করপোরেশন’ ড. আব্দুল কাদির খান রিসার্চ ল্যাবরেটরিজকে ৫ হাজার রিং ম্যাগনেট পাঠায়।
চীনা ন্যাশনাল নিউক্লিয়ার করপোরেশন (সিএনএনসি) চীনের বৃহত্তম পারমাণবিক শক্তি প্রতিষ্ঠান। যা পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে কাজ করা প্রাথমিক গবেষণা সংস্থাগুলোর মধ্যে একটি। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ড প্রমাণ করে পাকিস্তানের ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক শক্তিতে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বেচ্ছা অবদান ছিল।
ইফরাস বলছে, গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর পিএইসি ও সিজডেইসি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এগুলো চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে পারমাণবিক শক্তি সহযোগিতা গভীর করার চুক্তি, যা ইউরেনিয়ামের খনি ও ইউরেনিয়াম প্রক্রিয়াকরণ, পারমাণবিক জ্বালানি সরবরাহ এবং গবেষণা চুল্লি স্থাপনের জন্য প্রযুক্তি স্থানান্তর সক্ষম করবে।