কক্সবাজারে বেড়াতে গিয়ে গণধর্ষণের শিকার হবার অভিযোগ করেছিলেন এক পর্যটক। কিন্তু সেই নারীর মেডিক্যাল পরীক্ষায় ধর্ষণের কোন আলামত পাওয়া যায়নি।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের গাইনি বিভাগের চিকিৎসকেরা ওই নারীর মেডিক্যাল পরীক্ষার পর গত জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে এই সংক্রান্ত প্রতিবেদন দেন।
হাসপাতালটির গাইনি বিভাগের চিকিৎসক ডা. মাহফুজুর রহমানের সই করা ওই প্রতিবেদনের একটি অনুলিপি একাত্তর টেলিভিশনের হাতে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভিকটিম সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হওয়ার অভিযোগ তুলেছেন, তবে এ ক্ষেত্রে শরীরে যে ধরনের আঘাত বা ক্ষতের চিহ্ন থাকে, সে ধরনের কিছু পাওয়া যায়নি।
এতে আরও বলা হয়েছে, জোরপূর্বক বা দল বেধে ধর্ষণের ফলে শরীর ও যৌনাঙ্গে যে পরিস্থিতি থাকার কথা, তা পাওয়া যায়নি। তার মানসিক অবস্থাও স্বাভাবিক বলে মনে হয়েছে।
ওই নারীর অভিযোগ
গত বছরের ২২ ডিসেম্বর কক্সবাজারে স্বামী ও সন্তানকে জিম্মি করে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ তোলেন ওই নারী।
তার ভাষ্য মতে, তিনি স্বামী-সন্তান নিয়ে ওই দিন (২২ ডিসেম্বর) সকালে কক্সবাজার পৌঁছান। এরপর শহরের হলিডে মোড়ের সি ল্যান্ড হোটেলের ২০১ নম্বর কক্ষ ভাড়া নেন। বিকেলে সৈকতে গেলে সাড়ে পাঁচটার দিকে তার স্বামীর সঙ্গে এক যুবকের বাগবিতণ্ডা হয়।
এর জেরে ওই দিন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার কিছু পর পর্যটন গলফ মাঠের সামনে থেকে তার আট মাসের সন্তান ও স্বামীকে কয়েকজন তুলে নিয়ে যায়। আর তাকে একটি সিএনজি অটোরিকশায় জোর করে তুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
ওই নারীর অভিযোগ, তাকে শহরের একটি ঝুপড়ি চায়ের দোকানে নিয়ে প্রথমে তিনজন ধর্ষণ করেন। তারপর নেওয়া হয় হোটেল-মোটেল জোনের জিয়া গেস্ট ইন নামের একটি হোটেলে। সেখানে আবারও তাকে ধর্ষণ করেন একজন।
অভিযুক্তরা কে, কোথায়?
এ ঘটনায় পরদিন ওই নারীর স্বামী চারজনের নাম উল্লেখ ও তিনজনকে অজ্ঞাত আসামি করে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলা করেন।
মামলায় নাম উল্লেখ করা চার আসামি হলেন, কক্সবাজার শহরের মধ্যম বাহারছড়া এলাকার আশিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ শফি ওরফে ইসরাফিল হুদা জয় ওরফে জয়া, মেহেদী হাসান বাবু ও জিয়া গেস্ট ইন হোটেলের ম্যানেজার রিয়াজ উদ্দিন ছোটন।
নারীর করা ধর্ষণ মামলায় জেলে আছেন আশিকুল ইসলাম, ইসরাফিল হুদা জয়, মেহেদী হাসান বাবু ও হোটেল ম্যানেজার রিয়াজ উদ্দিন ছোটন, কক্সবাজার শহরের দক্ষিণ বাহারছড়া এলাকার রেজাউল করিম, একই এলাকার মেহেদী হাসান এবং চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের উলুবনিয়া গ্রামের মামুনুর রশীদ। তাদের বিরুদ্ধে ঘটনায় সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়েছে।
নামসহ অভিযুক্ত এবং সহযোগিতার অভিযোগে অভিযুক্ত সবাই বর্তমানে জেলে আছেন।
অনুসন্ধানে যা জানা গিয়েছিল
সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ তোলা নারীর স্বামী প্রথম দিকে নিজেদের ‘পর্যটক’ হিসেবে দাবি করলেও পরে বেরিয়ে আসে তারা দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজারে অবস্থান করছিলেন। এ ছাড়া এ ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত আশিকসহ কয়েকজন তাদের পূর্ব পরিচিত।
‘সংঘবদ্ধ ধর্ষণের’ অভিযোগ তোলা নারী কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম হামীমুন তানজীনের আদালতে জবানবন্দিতে জানান, তার সন্তান জন্মের পর থেকেই অসুস্থ। সন্তানের চিকিৎসার জন্য অন্তত চার লাখ টাকা প্রয়োজন। সেই টাকা জোগাড় করতেই তিন মাস আগে তারা কক্সবাজারে আসেন। কক্সবাজারে তিন মাস ধরে তারা বিভিন্ন হোটেলে কক্ষ ভাড়া করে থাকছিলেন।
তবে এর আগেও তারা কক্সবাজারে ছিলেন বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। গত বছরের জানুয়ারিতে জেলা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন ওই নারী। সে সময় একটি মামলার আসামি হিসেবে কারাগারে গেলেও কিছু দিনের মধ্যে তিনি জামিনে ছাড়া পান।
মামলার পর ওই নারীকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করে পুলিশ।