কর্ণাটকের মাণ্ড্য প্রি-ইউনিভার্সিটি কলেজের হিজাব বিতর্কে তোলপাড় গোটা ভারতবর্ষ। কর্ণাটক থেকে বিক্ষোভের পারদ এখন গোটা ভারতবর্ষে। এ নিয়ে চলছে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ। কলকাতাতেও এ নিয়ে তুমুল বিক্ষোভ হয়েছে। এ নিয়ে সতর্ক দেশটির বিভিন্ন রাজ্য।
কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে সে জন্য কর্ণাটক রাজ্যের রাজধানী বেঙ্গালুরু শহরের স্কুল-কলেজের আশপাশে ১৪৪ ধারা জারি করেছে কর্নাটক সরকার। আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি থাকবে বলে সরকারি এক নির্দেশনায় জানানো হয়েছে। খবর আনন্দবাজারের।
বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বেঙ্গালুরুর পুলিশ কমিশনার কমল পান্ত বলেন, ‘শহরে উত্তেজনা রয়েছে। নতুন করে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাই শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য যথাযথ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা অপরিহার্য। এই পরিস্থিতিতে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে স্কুল-কলেজের আশপাশে ফৌজদারি দণ্ডবিধির অনুযায়ী ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।’
তিনি জানান, ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বেঙ্গালুরুর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ২০০ মিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে কোনও রকম জমায়েত বা বিক্ষোভ প্রদর্শন চলবে না।
এদিকে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়, হিজাব নিয়ে বিতর্কের শুরু হয় কর্ণাটকের উদুপি জেলার একটি কলেজ ঘিরে। উদুপির পাশাপাশি রাজ্যের মান্ডিয়া ও শিভামোগার মতো শহরের কলেজগুলোতে বিক্ষোভ শুরু হয়। এর বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে গেরুয়া উত্তরীয় পরে মুসলিম শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে হিন্দুত্ববাদী স্লোগান দিতে দেখা গেছে অনেককে। দুই ধর্মের শিক্ষার্থীদের মধ্যে নানা স্থানে বচসাও হয়েছে।
এদিকে হিজাব বিতর্কে উত্তপ্ত কর্ণাটকে বুধবার থেকে তিন দিন সমস্ত স্কুল ও কলেজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্ণাটক সরকার। কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাই মঙ্গলবার বিকেলে টুইট করে এই নির্দেশ দিয়েছেন।
টুইটে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি সমস্ত ছাত্র, শিক্ষক এবং স্কুল ও কলেজের কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি কর্ণাটকের সাধারণ মানুষকে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য আবেদন করছি। আগামী তিন দিনের জন্য সমস্ত হাই স্কুল ও কলেজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছি আমি। সংশ্লিষ্ট সকলকে সহযোগিতার জন্য অনুরোধ করছি।’
গতকাল মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে দেখা যায়, কর্ণাটকের মাণ্ড্য প্রি-ইউনিভার্সিটি কলেজের হিজাব পরা মুসকান খান নামে এক ছাত্রী একটি স্কুটিতে কলেজ চত্বরে প্রবেশ করছেন। যেখানে আগে থেকেই উপস্থিত ছিল গেরুয়া উত্তরীয় পরা একদল ছাত্র। ছাত্রীটি গাড়ি পার্ক করে ক্লাসের দিকে এগোতেই তাকে ঘিরে ধরে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দিতে থাকে ছাত্ররা। একটা সময় ঘুরে দাঁড়ান ছাত্রী। চোয়াল শক্ত করে পাল্টা ‘আল্লাহু আকবর’ স্লোগান দিতে দেখা যায় তাকে।
পরে সেদিনের সেই ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মুসকান খান বলেন, ‘আমি যখন কলেজে ঢুকছিলাম, তখন বাধা দেওয়া হয়। জিজ্ঞেস করা হয়, আমি কেন বোরকা পরে এসেছি? কিন্তু আমি এসব নিয়ে মোটেও চিন্তিত নই। সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে মুসকান দাবি করেন, আমাকে দেখেই ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দেওয়া শুরু হয়। আমিও পাল্টা ‘আল্লাহু আকবর’ স্লোগান দিতে থাকি।’
তার দাবি, উপস্থিত গেরুয়া উত্তরীয় পরাদের কয়েকজনকে তিনি চিনতে পেরেছিলেন। কারণ তারাও মুসকানের সহপাঠী। তবে বেশির ভাগই বহিরাগত। মুসকান জানিয়েছেন, পড়াশোনা করাই তার অগ্রাধিকার। তার কথায়, ওরা আমাদের পড়াশোনা করার অধিকারটাই ছিনিয়ে নিতে চায়, এক টুকরো কাপড়ের জন্য!
এদিকে হিজাব নিয়ে বিতর্ক কর্ণাটকের বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে। মধ্য প্রদেশ রাজ্যের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার জানিয়েছে, রাজ্যটিতে হিজাব নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব নিষিদ্ধের কোনো ভাবনা নেই রাজ্য সরকারের। তাই বিষয়টি নিয়ে কোনো বিভ্রান্তির সুযোগ নেই।
অন্যদিকে এই ঘটনার পর আজ বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) ফের হিজাব সংক্রান্ত মামলার শুনানি রয়েছে কর্ণাটক হাইকোর্টে। জনসাধারণকে শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানিয়েছে আদালত। পাশাপাশি হাইকোর্ট জানিয়েছে, এই বিষয়ে সংবিধান অনুযায়ীই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে কর্ণাটকের হিজাব বিতর্কে ছাত্রীদের সমর্থন জানিয়ে একটি টুইট করেছেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। প্রিয়াঙ্কা টুইট বার্তায় বলেন, নারীরা কোন ধরনের কাপড় পরবে, সেটি তাদের একান্ত ব্যক্তিগত এবং সংবিধান দ্বারা স্বীকৃত অধিকার।
তিনি আরও বলেন, একজন নারী কী পরতে চায় তা তার নিজের অধিকার। হতে পারে তা বিকিনি, ঘোমটা, জিন্স কিংবা হিজাব। এটি ভারতীয়দের সাংবিধানিক অধিকার। হ্যাশট্যাগ ‘লড়তি হুঁ, লড় সকতি হুঁ’ দিয়ে তিনি তাই নারীদের অপদস্ত করা বন্ধ করার আহ্বান জানান।