দেশের পরিবহন খাতকে ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনতে ‘গো বাংলাদেশ’ নামে একটি প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন জবির ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের কম্পিউটার সায়েন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (৮ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম তাদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
এই প্রকল্পটি মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত ‘মুজিব ১০০ আইডিয়া’ প্রতিযোগিতা-২০২১ এ সেরা ১০০ এর মধ্যে ৩০তম স্থান করে নিয়েছে। প্রকল্পটি মোবাইল এপ্লিকেশনভিত্তিক একটি আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থা। যা বর্তমান সিস্টেমের বিকল্প, নির্ভুল, নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য এবং সাশ্রয়ী। কিউআর কোড, ডিজিটাল ওয়ালেট, মোবাইল ব্যাংকিং এবং ট্র্যাকিং সিস্টেম ব্যবহার করে এপ্লিকেশনটির মাধ্যমে যাত্রী, পরিবহন শ্রমিক ও পরিবহন মালিকদের একই ছায়াতলে নিয়ে আসতে সক্ষম হবে এই প্রকল্পটি।
দেশের প্রায় সব সেক্টরেই ডিজিটালাইজেশনের ছোঁয়া লাগলেও পরিবহন খাত এখনও অবহেলিত। টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়ানো ও কাগজের টিকিটই গণপরিবহন সিস্টেম। রেজিস্ট্রেশন ছাড়া বাস (১.৫ মিলিয়ন), লাইসেন্স ছাড়া ড্রাইভার (৭৭ শতাংশ), ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন (৮৭ শতাংশ), অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন ও ভাড়া নিয়ে পরিবহন শ্রমিকদের দুর্ব্যবহার নিত্যদিনের ঘটনা। গণপরিবহনে ঘটা আরেকটি উদ্বেগজনক অপরাধ হচ্ছে নারীদের যৌন হয়রানি (৯৪ শতাংশ)। অনিবন্ধিত বাস ও ড্রাইভার এই সিস্টেম ব্যবহার করতে পারবে না।
বাসের প্রতিটি সিটের পেছনে একটি করে কিউআর কোড লাগানো থাকবে। যাত্রী যে সিটে বসে আছে তার সামনের সিটের পিছনে সেই সিটের কিউআর কোডটি থাকবে। যাত্রীরা তার সামনের কিউআর কোডটি স্ক্যান করার মাধ্যমে শুধুমাত্র গন্তব্য সিলেক্ট করে ভাড়া দিয়ে দিতে পারবে। তার জন্য ডিজিটাল ওয়ালেট থেকে টাকা কেটে নিবে।
এছাড়া এ প্রজেক্টটির দ্বারা ভবিষ্যৎ ভ্রমণের জন্য অগ্রিম টিকিটও বুক করে রাখতে পারবে। ভ্রমণের বিপরীতে কোন মন্তব্য বা অভিযোগ থাকলে যাত্রীরা তা একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত প্রদান করতে পারবে ও সেবার মান সম্পর্কে মন্তব্য করতে পারবে। যা সরাসরি পরিবহন মালিকরা দেখতে পারবে। এর দ্বারা বৈধ ড্রাইভার ও হেলপারের জন্য যাত্রী ব্যবস্থাপনাও সহজ হবে এবং কোন যাত্রী ডিজিটালি ভাড়া দিতে না পারলে ক্যাশ টাকার মাধ্যমেও ভাড়া নিতে পারবে। যাত্রীরা বিকাশ, নগদ, রকেট বা কার্ডের মাধ্যমের ভাড়া প্রদান করতে পারবেন। যাত্রীদের এ পেমেন্ট করা ভাড়া সরাসরি পরিবহন মালিকের মার্চেন্ট একাউন্টে যোগ হবে এবং টাকার মাধ্যমে নেওয়া ভাড়া ড্রাইভার মালিককে প্রদান করবে। এছাড়াও তিনি যেকোন সময় বাসের অবস্থান, ড্রাইভারের বিস্তারিত, যাত্রীর তথ্য এবং যাত্রীদের অভিযোগগুলোও দেখতে পারবেন।
এছাড়া প্রকল্পটি সিটি ইউনিভার্সিটি আয়োজিত ‘সিএসই ফেস্টিভ্যাল-২০২১’- এ ‘আইডিয়া, ইনোভেশন এন্ড ইনভেনশন‘ প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে। প্রস্তাবিত পদ্ধতিটি বাস্তবায়নের জন্য ৬ ফেব্রুয়ারি-২০২২ ইনোভেশন ডিজাইন এন্ড ইন্টারপ্রিনারশিপ একাডেমি (আইডিইএ) হতে ১০ লাখ টাকার ফান্ড পেয়েছে এই প্রকল্পটি। ‘হিমাচল পরিবহন’ সিস্টেমটি ব্যবহারের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের ধারনা, তাদের এই প্রকল্পটি বাংলাদেশের পরিবহন খাতকে ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
এবিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষার্থীদের এমন সৃষ্টিশীল কাজের জন্য তাদের অভিবাদন জানাই। শিক্ষার্থীদের গবেষণা ও সৃষ্টিশীল কাজের পাশে আমরা সব সময় তাদের সাথে আছি। তরুণদের এমন উদ্ভাবনী কাজের সহায়তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সব সময় আছে।