বরিশাল/ বলহীন সেই বৃদ্ধার পাশে জেলা প্রশাসক
বরিশাল শহরের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের রূপাতলী গ্যাসটারবাইন এলাকার তরুণ রবিউল ইসলামের বাড়িতে আশ্রয়ে থাকা অসুস্থ সাবিত্রী কর্মকারের (৯০) পাশে দাঁড়াল জেলা প্রশাসন। আজ বৃহস্পতিবার অপরাহ্নে বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার সাবিত্রী কর্মকারকে দেখতে যান। এ সময় ছোট্ট টিনের ঝুপড়ি ঘরে আশ্রিত সাবিত্রীর শরীরের খোঁজখবর নেন এবং তাঁর চিকিৎসা ও ভরণপোষণের জন্য ৫০ হাজার টাকা দেন জেলা প্রশাসক। একই সঙ্গে তাঁকে বয়স্ক ভাতার ব্যবস্থা ও সব রকমের সহায়তার আশ্বাস দেন তিনি। পাশাপাশি সাবিত্রী কর্মকারকে মায়ের মতো শুশ্রূষা করায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তরুণ রবিউল ইসলামকে পুরস্কৃত করা হবে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।
জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (এনডিসি) মো. নাজমূল হুদা, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক আল মামুন তালুকদার, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে কর্মরত সমাজসেবা বিভাগের প্রবেশন কর্মকর্তা সাজ্জাদ পারভেজ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, ‘সমাজের কোনো মানুষ যেন এভাবে পরিবারের দ্বারা অবহেলিত না হন, সে জন্য চোখকান খোলা রাখতে হবে। মানবতার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।’
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ‘সাবিত্রীকে আমরা আপাতত ৫০ হাজার টাকা সহায়তা দিয়েছি। তাঁকে বয়স্ক ভাতা দেওয়া হবে। পাশাপাশি সাবিত্রী কর্মকারকে মায়ের মতো শুশ্রূষা করায় তরুণ রবিউল ইসলামকে পুরস্কৃত করা হবে। আমাদের সমাজে রবিউল ইসলামদের মতো এমন অনেক তরুণের প্রয়োজন। যেসব সন্তান মাকে রাস্তায় ফেলে গেছে, তাদের বিপরীতে রবিউল ইসলাম হচ্ছেন মানবিকতার উদাহরণ।’
প্রায় আট মাস আগে বৃদ্ধা সাবিত্রী কর্মকারকে বরিশাল সিটি করপোরেশনের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের রূপাতলী গ্যাসটারবাইন এলাকার পাটনি বাড়ি রোডে রেখে যান এক ব্যক্তি। এ সময় অসুস্থ ছিলেন সাবিত্রী। তাঁকে উদ্ধার করে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান তরুণ রবিউল ইসলাম। সেখানে দুই মাস চিকিৎসা শেষে স্বজনদের কোনো খোঁজ না পেয়ে তাঁর বাসায় নিয়ে আসেন সাবিত্রীকে। তাঁর সেবা-শুশ্রূষার জন্য মাসিক চুক্তিতে নিয়োগ দিয়েছেন আরেক নারীকে।
রবিউল বলেন, ‘সাবিত্রী কর্মকার একজন মানুষ। আমি চাইলে তাঁকে রাস্তায় ফেলে রেখে চলে আসতে পারতাম। কিন্তু সেটি করলে মানুষ হয়ে জন্মানোটা বৃথা হয়ে যেত।’
জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী সাবিত্রীর জন্ম ১৯৩৫ সালের ১ জানুয়ারি। তাঁর বাবা ভদ্রকান্ত কর্মকার এবং মা সুকুদা কর্মকার। ঠিকানা দেওয়া আছে বরিশাল নগরের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের বৈদ্যপাড়া এলাকার ৭৭৫ নম্বর হোল্ডিংয়ের। তবে ওই ঠিকানায় খোঁজ নিয়ে রবিউল জেনেছেন, অনেক বছর আগে সাবিত্রী ওই এলাকার ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। সেখানকার বর্তমান বাসিন্দারা তাঁকে চেনেন না।
পক্ষাঘাতে আক্রান্ত সাবিত্রী ঠিকমতো উঠতে–বসতে পারেন না। শরীরের বাঁ পাশ অবশ বলে নড়াচড়া করতেও পারেন না। তাঁর এমন অবস্থার খবর পেয়ে গত শুক্রবার দুপুরে রবিউলের বাসায় যান জেলা প্রশাসক। জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দারের নির্দেশে বরিশাল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে নিযুক্ত সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রবেশন কর্মকর্তা সাজ্জাদ পারভেজ রবিউলের বাসায় গিয়ে সাবিত্রীর খোঁজখবর নেন।
প্রবেশন কর্মকর্তা সাজ্জাদ পারভেজ বলেন, ‘সাবিত্রীকে আপাতত ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। তাঁর জন্য বয়স্ক ভাতার কার্ড তৈরির প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। শিগগিরই এটা করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া তাঁর যে ধরনের সহায়তা প্রয়োজন, তা–ও দেওয়া হবে। আমরা সাবিত্রীর এক ছেলের সন্ধান পেয়েছি। তদন্ত করে তাঁকে পাওয়া গেলে ওই ছেলের বিরুদ্ধে ভরণপোষণ আইনে মামলা করা হবে।’