বাবার শ্রাদ্ধ করে ফেরার পথে দুর্ঘটনায় পাঁচ ভাইয়ের মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত পিকআপ চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল না। আত্মগোপনে প্রথমে বান্দরবানের লামাতে লুকালেও ঘটনা নিয়ে সাড়া পড়ে যাওয়ায় ঢাকায় চলে আসেন তিনি।
এমন সব তথ্যই চালক সাইফুল ইসলামকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে উঠে এসেছে। শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
এর আগে, ৮ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারে কক্সবাজারের চকরিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের পাঁচ ভাইয়ের মৃত্যুর ঘটনায় শুক্রবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে চালক সাইফুলকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাইফুল জানিয়েছে, ওই পিকআপে সবজি পরিবহন করা হতো। ঘটনার দিন পিকআপে চালক ছাড়াও গাড়ির মালিকের ছেলে ও ভাগনে উপস্থিত ছিলেন।
সকালের দিক কুয়াশা থাকায় সাইফুল দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিদের প্রথমে দেখতে পাননি। শেষ সময়ে ৬৫-৭০ কিলোমিটার বেগে আসা গাড়িটির ব্রেক চেপে ধরলেও তাতে লাভ হয়নি। প্রায় ৫০-১০০ ফুট দূরে গিয়ে থামে গাড়িটি।
এসময় আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাইলেও গাড়ির মালিকের ছেলে তারেক তাতে বাধা দেয় এবং ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে একটি বাজারে গিয়ে পিকআপ রেখে মালিককে ফোন দেয় সাইফুল। এ ঘটনায় মামলা হবে জানিয়ে এক বছরের জন্য লুকিয়ে থাকতে পরামর্শ দেন।
এরপর লামায় একটি রাবার বাগানে কাজ নিয়ে লুকানোর সিদ্ধান্ত নিলেও ঘটনা নিয়ে শোরগোল পড়ে যাওয়ায় সেই স্থানও ত্যাগ করেন তিনি।
ব্রিফিংয়ে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলেও গত দুই বছর ধরে বিভিন্ন ধরনের গাড়ি চালাচ্ছিলেন। আর দৈনিক ৫০০ টাকা মজুরিতে এই পিকআপ সাতদিন আগে চালানো শুরু করেন তিনি। এছাড়া গাড়ির কাগজও ২০১৮ সালের পর নবায়ন করা হয়নি।
ওই ঘটনায় গাড়ির মালিক মাহমুদুল ও তার ছেলে পলাতক আছে।
প্রসঙ্গত, ২৮ জানুয়ারি কক্সবাজারের চকরিয়ায় বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান সুরেশ চন্দ্র। তার সৎকার পরবর্তী সব নিয়ম পালন করতে মন্দিরে যান সুরেশ চন্দ্র শীলের ছয় ছেলে ও দুই মেয়ে। পূজা শেষে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে বসে কিছু আনুষ্ঠানিকতা পালনের সময় একটি পিকআপ ভ্যান তাদের চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই প্রাণ যায় চার ভাইয়ের। এ ঘটনায় গুরুতর আহত অপর দুই ভাই ও দুই বোনকে হাসপাতালে নেওয়া হলে সকাল ১১টার দিকে আরেক ভাইয়ের মৃত্যু হয়।
নিহত পাঁচ ভাই হলেন অনুপম সুশীল (৪৬), নিরুপম সুশীল (৪০), দীপক সুশীল (৩৫), চম্পক সুশীল (৩০) ও স্মরণ সুশীল (২৯)।
ঘটনার রাতেই নিহতদের আরেক ভাই প্লাবন চন্দ্র সুশীল বাদী হয়ে অজ্ঞাত পিকআপভ্যান চালককে আসামি করে চকরিয়া থানায় মামলা করে।