নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দিতে রাষ্ট্রপতির কাছে কাদের নাম প্রস্তাব করবে সার্চ কমিটি সেটি মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বৈঠকের পর জানা যাবে।
রোববার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বিশিষ্টজনদের সঙ্গে সার্চ কমিটির বৈঠকের পর কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেওয়ার দায়িত্বে থাকা মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৫টা পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলো তাদের পছন্দের নাম কমিটির কাছে জমা দিতে পারবে। মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টায় সার্চ কমিটির বৈঠক শুরু হবে। বৈঠকের পর প্রস্তাবিত নাম জানা যাবে।
এর আগে বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে সুপ্রিম কোর্টের জাজেস কনফারেন্স লাউঞ্জে নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের লক্ষ্যে মতামত নিতে বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসে সার্চ কমিটি। এ দফায় ২৩ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও ১৮ জন সাড়া দেন।
বৈঠকের শুরুতেই সার্চ কমিটির প্রধান আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য গঠিত সার্চ কমিটির কাছে আসা সবার নাম সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে প্রকাশ করা হবে। সেখান থেকে নাম প্রকাশ করতে পারবে গণমাধ্যমও।
টানা ২ ঘণ্টা বৈঠক শেষে সন্ধ্যা ৬টার দিকে বের হয়ে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য কোনো ব্যক্তি পাওয়া যাবে না। নিরপেক্ষ বলেও কোনো ব্যক্তি নেই। সবকিছু সার্চ কমিটির ওপর চাপিয়ে দিলে হবে না। মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী নন এমন কাউকেও কেউ চাইবে না। আবার নির্বাচন কমিশন চাইলেই সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়। এর কারণ এর সঙ্গে রাজনৈতিক দলসহ অনেকগুলো বিষয় জড়িত। তাই আমি মনে করি, সার্চ কমিটিকে এমন ব্যক্তি খুঁজে বের করতে হবে- যিনি সৎ ও সাহস নিয়ে নির্বাচন পরিচালনা করতে পারবেন, যোগ করেন এই ইতিহাসবিদ ও সাহিত্যিক।
অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন কমিশন চেয়েছি। সেখানে আমলাতন্ত্র ও জুডিশিয়ারির যে ধারায় কমিশনে নিয়োগ দেওয়া হয় সেটা বাদ দিতে বলেছি। আমরা চাই কমিশনে সিভিল সোসাইটি এবং নারী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব থাকুক।
এসময় ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে প্রধানমন্ত্রীকেও কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে পারে এমন সৎ ও সাহসী ব্যক্তির নাম নির্বাচন কমিশনার হিসেবে সার্চ কমিটির কাছে প্রস্তাব করেছি। তাকে অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হতে হবে।
শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘সার্চ কমিটির বৈঠকে বলেছি, নিরপেক্ষ না খুঁজে সাহসী ও সৎ খুঁজতে হবে। সময় লাগলে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কথা বলতে বলেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সার্চ কমিটিতে নির্বাচন কমিশনের জন্য ১০ জনের নাম প্রস্তাব করেছি। আমাদের তালিকায় নারী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ব্যক্তিদেরও নাম রয়েছে।’
নতুন ইসি গঠনে শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) প্রথম দফায় বেলা সোয়া ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় দফায় বেলা ১টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত বিশিষ্টজনদের মতামত নেয় সার্চ কমিটি। এই দুটি সভায় অধ্যাপক, গণমাধ্যমের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তি, সরকারি সাবেক কর্মকর্তা এবং সামরিক বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা, পেশাজীবী সংগঠনের নেতারাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ২৫ বিশিষ্ট ব্যক্তি অংশ নেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ অনুসারে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করে গত ৫ জানুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। আইন অনুযায়ী কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ পেশ করতে হবে। কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দিচ্ছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণ করে। সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) তাদের পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে।