মৃত্যুর ২৪ ঘন্টা পরও বাবার মরদেহ দাফন করতে দিলো না সন্তান। মৃতের শরীরে পচন ধরার পর এলাকাবাসী চাঁদা তুলে জোগাড় করে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়ি।
জানাজা আর দাফনের বদলে বাবার রেখে যাওয়া সম্পদের ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে চলছিলো সন্তানদের লড়াই।
মৃতের স্ত্রী আর বড় সন্তানের অভিযোগ করেছেন, সব সম্পত্তি লিখে নিয়ে বাবা সাবেক ব্যাংকার ফিরোজ ভূইয়াকে হত্যা করেছে ছোট ছেলে।
সাবেক ব্যাংকার ফিরোজ ভূইয়া মারা যান গেলো শুক্রবার সন্ধ্যায়। ২৪ ঘন্টা পরে শনিবার সন্ধ্যাতেও বাড়ির নিচ তলায় পড়েছিলো তার মরদেহ।
বাড়ি জুড়ে ছিলো না কোন শোকের আবহ। মৃতের পাশে ছিলো না কোন স্বজনের উপস্থিতি। যেন নিজ বাড়িতেই অজ্ঞাত লাশ হয়ে পড়ে আছেন ফিরোজ ভুইয়া।
নিচ তলায় যখন তার নিথর মরদেহ, বাড়ির ওপরের তলায় চলছিলো সম্পত্তি নিয়ে দুই সন্তানের কাড়াকাড়ি। সালিশে বসেছে এলাকাবাসি।
বড় ছেলে রাকিব ভুইয়া কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন। তার অভিযোগ সম্পত্তির লোভে বাবাকে হত্যা করেছে ছোট ভাই। হত্যা করার আগে বাবার কাছ থেকে সব সম্পত্তি লিখে নিয়েছে।
বড় ছেলে আরো অভিযোগ, বাড্ডার পাঁচ তলা বাড়ি ও বাবা-মায়ের অবসরের এক কোটি টাকা এবং নরসিংদীর আরও একটি বাড়ি নিজের নামে লিখে নিয়েছে ছোট ভাই।
মায়ের অভিযোগের তীরও ছোট ছেলে আবিরের দিকে। স্বামীর মরদেহ যখন নিজ বাড়িতে সন্তানের নির্যাতনের ভয়ে স্ত্রী খাদিজা তখন প্রতিবেশীর আশ্রয়ে।
ছোট ছেলে আবির ভূইয়ার নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে কেঁপে উঠছিলেন অসহায় মা। অথচ, অভিযুক্ত ছোট ছেলে অবিরের দাবি বাবা তাকে সব সম্পত্তি লিখে দিয়েছেন।
সম্পদ ভাগের মীমাংসা যখন হচ্ছিল না, তখন এলাকাবাসীর চাঁদায় একটি একটি শীতাতপ অ্যাম্বুলেন্সে ঠাই পেলো ফিরোজ ভূইয়ার মরদেহ। এমন ঘটনায় হতবাক এলাকাবাসীও।
রাত আটটার দিকে বাড়িটিতে আসে পুলিশ। মরদেহ পাঠানো হলো নরসিংদী গ্রামের বাড়িতে। বাড্ডা থানার ওসি জানালেন, হত্যার অভিযোগ পেলে নেয়া হবে মামলা।
বাড়ির তৃতীয় তলার একটি রুমে পরিত্যাক্ত আসবাবের সাথে থাকতো ফিরোজ ভূইয়া এবং তার স্ত্রী। সেই রুমের দেয়ালে এখনো ঝুলছে তাদের সুসময়ের নানা স্মৃতি।
নিজের বাড়ি আর ব্যাংকে কোটি টাকা- সন্তানের লোভের কাছে সবই হার মেনেছে। সন্তানের নির্যাতনের ভয়ে মা থাকতে চান না ছোট ছেলের কাছে। আর শূণ্য হাতে অমানবিক চির বিদায় নিলেন বাবা ফিরোজ ভুইয়া।