এসেছে বসন্ত, এসেছে ভালোবাসা। প্রকৃতি যেন জানিয়ে দিয়েছে ভালোবাসার বার্তা। ফাগুনের রঙে ভালোবাসায় মেতে উঠবে সবাই। যে যার মতো করে বেছে নেবে ভালো থাকার, ভালো লাগার এই দিনটিকে।
বছরের পর বছর ধরে বদলেছে মানুষের চিন্তা, মনের বদলে যাওয়া এবং ঘটেছে ভালোবাসার পরিবর্তন। ঠিক এই পরিবর্তনের কথাই উঠে এসেছে সিনেমার মাধ্যমে।
ভালোবাসার এই দিনটির জন্য যেমন আছে অপেক্ষা, ঠিক তেমনি আছে পাওয়া না পাওয়ার গল্প। আছে অভিমান, আছে নতুনের ডাক।
আর যদি সিনেমায় ভালোবাসার রঙ ছড়িয়ে যায় তাহলে কেমন হয়? তাহলে জেনে নেই বিশ্বের অন্যতম সেরা দশ রোমান্টিক চলচ্চিত্রের নাম।
২০১২ সালে তার নির্মিত ‘টাইটানিক’ ছবিটি এখনো সমানভাবে জনপ্রিয় তরুণ প্রজন্মের কাছে। ১১টি বিষয়ে অস্কার জিতেছিল তার এই সিনেমা। একই সঙ্গে ব্যবসায়িক সাফল্যও পেয়েছে টাইটানিক। বিশ্বের বেশি আয় করা সিনেমার মধ্যে এটিও অন্যতম।
আর এতে অভিনয় করে সবার মনের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছেন লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও ও কেট উইন্সলেট। এই রোমান্টিক জুটি এখনো জনপ্রিয়তার শীর্ষে সিনেমাপ্রেমিদের কাছে। ছবিটি তৈরি করেছেন অস্কার জয়ী পরিচালক জেমস ফ্রান্সিস ক্যামেরন।
রোমান হলিডে ১৯৫৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত হলিউডের আরেকটি রোমান্টিক সিনেমা। উইলিয়াম ওয়াইলার প্রযোজিত ও পরিচালিত এই চলচ্চিত্রে কাগজের রিপোর্টার জো ব্রাডলি চরিত্রে অভিনয় করেছেন গ্রেগরি পেক এবং পালিয়ে রোম নগরী দেখতে যাওয়া রাজ সিংহাসনের পরবর্তী উত্তরাধিকারিণী প্রিন্সেস চরিত্রে অভিনয় করেন ব্রিটিশ অভিনেত্রী অড্রে হেপবার্ন।
তিনি এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্যে সেরা অভিনেত্রী বিভাগে একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। অড্রে হেপবার্নকে অপরুপা হিসেবে এখনো চিনে সবাই। সিনেমায় তার অসাধারণ অভিনয় দাগ কাটে সবার মনে।
প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম শেক্সপিয়ার রচিত একটি বিয়োগান্তক নাটক, যা নির্মিত হয় দুজন প্রেমিক-প্রেমিকার অনবদ্য প্রেম আর ত্যাগকে কেন্দ্র করে। পরবর্তী সময়ে তাদের মৃত্যু বিবাদমান দুই পরিবারকে একত্রিত করে। এটি শেকসপিয়রের জীবদ্দশায় সবচেয়ে জনপ্রিয় ও পাঠকনন্দিত নাটকও ছিল। বলাই বাহুল্য সেটি সিনেমার চিত্রপটে আঁকা হলে কতটা জনপ্রিয় হতে পারে।
উইলিয়াম শেকসপিয়ারের রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট নাটক অবলম্বনে চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেন ব্যাজ লুরমান। এতে অভিনয় করেন লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও ও ক্লেয়ার ডেইন্স। প্রেমিক যুগল বা রোমান্টিক জুটির প্রেম উপাখ্যান দাগ কাটে দর্শক মনে। আজও যেনো সেই জুটি প্রেম বার্তা পৌঁছে দেয় সবার কাছে।
এইতো কদিন আগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা কিম কি-দুক। সিনেমার পর্দায় কবিতা লেখা, সিনেমার এক গল্পের মধ্যে হাজারো গল্পের সৃষ্টি করা, সিনেমাকে ঠিক সিনেমার কাঠামো থেকে বের করে এনে দর্শকের সামনে হাজির করেছিলেন বিশ্বনন্দিত নির্মাতা কিম কি-দুক।
তারই অসাধারণ তৈরি করা এই অসাধারণ সিনেমাটি। প্রেম, আকাঙ্খা এবং মুক্তির বিষয়ে একটি বৌদ্ধ গল্পের সিনেমা এটি। কোরিয়ান প্রেমের গল্পটি একটি বিচ্ছিন্ন ভাসমান মন্দিরে একজন যুবকের আগমনের ঘটনাকে ঘিরে চিত্রায়ন করা হয়। কিম কি-দুক চলে গেলেও থেকে যাবে বামপন্থী ঘরানার এই সিনেমা আঁকিয়ের অসাধারণ গল্প।
গিয়ের্মো দেল তোরো পরিচালিত প্রণয়ধর্মী কল্প-বিজ্ঞান সংমিশ্রণের এক অসাধারণ চলচ্চিত্র। এটি যৌথভাবে নির্মাণ করেন দেল তোরো ও ভ্যানেস টেলর। এতে অভিনয় করেন স্যালি হকিন্স, মাইকেল শ্যানন, রিচার্ড জেনকিন্স, ডগ জোন্স, মাইকেল স্টুলবার্গ ও অক্টাভিয়া স্পেন্সার।
১৯৬২ সালের বাল্টিমোরের পটভূমিতে নির্মিত চলচ্চিত্রটিতে কড়া নিরাপত্তায় ঘেরা এক সরকারি গবেষণাগারে কর্মরত একজনের সঙ্গে সেখানে বন্দী মানুষের মত দেখতে অ্যাম্ফিবিয়ান প্রজাতির সঙ্গে প্রণয় দেখানো হয়েছে। সিনেমার প্রতিটি দৃশ্যপট অসাধারণ বলেই হয়তো এটিকে দর্শকদের বিমোহিত করে।
একটি মাত্র ছবিই অন্য আট-দশজন পরিচালকের কাছ থেকে গ্যারি মার্শালকে আলাদা করে। ছবির নাম ‘প্রিটি উইম্যান’। ১৯৯০ সালে নির্মিত হয় সিনেমাটি। সহজ সুন্দর করে পরিচালক তুলে ধরেছেন অসাধারণ এক প্রেমের গল্প।
জুলিয়া রবার্টস আর রিচার্ড গিয়ার অভিনীত অসাধারণ এই ছবি মাতিয়ে দিয়েছিল বিশ্বকে। পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন এই পরিচালক। কিন্তু তার সেই সিনেমা আজও নারীদের কাছে ভীষণ জনপ্রিয়।
ব্রিটিশ অভিনেত্রী কেইট উইন্সলেটের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় হিট সিনেমা ‘টাইটানিক’ হলেও চলচ্চিত্রপ্রে মীরা তাকে সবসময়ই মনে রাখবেন ‘ইটারনাল সানশাইন অফ আ স্পটলেস মাইন্ড’ সিনেমার নীল চুলের স্বাধীনচেতা মেয়ে ক্লেমেন্টাইন ক্রসিনস্কি হিসেবে।
অন্যদিকে কৌতুকাভিনেতা হিসেবে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি পেলেও জিম ক্যারির ক্যারিয়ারের অন্যতম মাইলফলক এই সিনেমা। আলেকজান্ডার পোপের কবিতা থেকে ধার করা শিরোনাম দিয়ে সেলুলয়েডের ফিতায় বেঁধে ফেলেছিলেন মাইকেল গন্ড্রি। চার্লস কফম্যানের অনবদ্য চিত্রনাট্যে সিনেমাটি হয়ে উঠেছে আরও উপভোগ্য।
প্রথম পরিচয়, প্রেমে পড়া, ধীরে ধীরে ভালবাসায় নিমজ্জিত হওয়া, আবার সেই ভালবাসার প্রতিই একসময় নিরাসক্ত হয়ে পড়া – আর দশটা মানবিক সম্পর্কের মতোই জোয়েল এবং ক্লেমেন্টাইনের ভালোবাসার গল্প এটি।
বিলি ওয়াইল্ডার প্রযোজিত ও পরিচালিত ১৯৬০ সালের সিনেমা দ্যা অ্যাপার্টমেন্ট। বক্স-অফিসে দারুণ জনপ্রিয় হওয়া সিনেমাটি সমালোচকদেরও মন জয় করে নিয়েছিল সমানভাবে। জিতে নিয়েছিল সেরা চলচ্চিত্র, সেরা পরিচালনা এবং সেরা চিত্রনাট্যসহ পাঁচটি অস্কার।
সব প্রেমই কী পরিণতি পায়? কিছু প্রেম ছোটগল্পের মতো। ‘শেষ হইয়াও’ যার শেষ হতে চায় না। আর এই অসম্পূর্ণতাতেই যেন তাদের মাহাত্ম। ঠিক সেরকমই একটি গল্প নিয়ে সিনেমা ‘ব্রিফ এনকাউন্টার’-এর। ট্রেন যাত্রায় এক নিষিদ্ধ আকর্ষণের টানে যে প্রেমের শুরু, তা শেষও হয়ে যায় ট্রেনের হুইসেলের সঙ্গে সঙ্গেই।
ক্লাসিক রোমান্টিক এই সিনেমায় ক্ষণিকের প্রেমিক-যুগলের ভূমিকায় অভিনয় করেন সিলিয়া জনসন এবং ট্রেভর হাওয়ার্ড। সেই সিনেমাটির পরিচালক ছিলেন ডেভিড লিন।
বলিউডের শাহরুখ খান আর কাজলের অসাধারণ প্রেমের অভিনয় নজর কাড়ে দর্শকদের। একটি রোমান্টিক জুটি আর তাদের প্রেম ঘিরে পারিবারিক ঘটনার অসাধারণ গল্পকথন যেনো শেষ হবার নয়। ভারতীয় সংস্কৃতির মেলবন্ধনে তৈরি করা এই সিনেমা এখনো জনপ্রিয়তার তালিকায় রয়েছে দর্শকদের। চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেন আদিত্য চোপড়া এবং এটিই তার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র।