একদিকে ইউক্রেন-রাশিয়া উত্তেজনা বাড়ছে। অন্যদিকে পশ্চিমাদেশগুলো যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। খোদ ইউক্রেনবাসীও পিছিয়ে নেই। মাতৃভূমিকে রক্ষা করতে দেশটির অসংখ্য বেসামরিক নাগরিক যুদ্ধ প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করছেন। তাদেরই একজন, ৭৯ বছরের বৃদ্ধা ভ্যালেন্টিনা কনস্টান্টিনোভস্কা।
ইউক্রেনকে বিদেশি আগ্রাসন থেকে বাঁচাতে হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছেন ৭৯ বছর বয়সী এই নারী। ভ্যালেন্টিনার এই সাহস আর দেশের প্রতি তার ভালোবাসা দেখে উচ্ছ্বাসিত পুরো ইউক্রেন। অনেকেই বলছেন, ‘ভ্যালেন্টিনা’ ইউক্রেনের পোস্টার বয়। তার সাহস ও দেশপ্রেম দেখে ইউক্রেনের তরুণরাও সাহস পাচ্ছেন। তাকে ‘নায়ক’ হিসাবে উল্লেখ করেছেন সবাই। শিশুদের সামনেও ভ্যালেন্টিনাকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরছেন তাদের অভিভাবকরা।
রোববার (১৩ ফেব্রুয়ারি) পূর্ব ইউক্রেনের মারিউপোলে দেশটির ন্যাশনাল গার্ড বেসামরিক নাগরিকদের একে-৪৭ অ্যাসল্ট রাইফেলের প্রশিক্ষণ দিয়েছে, ভ্যালেন্টিনাও ছিলেন সেখানে। প্রশিক্ষণের সময় তিনিও একে-৪৭ রাইফেল চালিয়েছেন।
রুশ সেনাদের আসন্ন আক্রমণের আগে একটি র্যাগ-ট্যাগ সেনাবাহিনী গড়ে তোলার জন্য ইউক্রেনজুড়ে পরিচালিত বেশ কয়েকটি মহড়া। এসব মহড়ায় অংশ নিয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ।
অনুশীলনের সময় ভ্যালেন্টিনা এনবিসি নিউজের প্রতিবেদককে বলেন, ‘আপনার মা থাকলে তিনিও একই কাজ করবেন।’
তিনি আরও বলেন, আমি এই প্রশিক্ষণ নিয়েছি কিন্তু আমি সম্ভবত খুব এগোতে পারবো না, কারণ আমার শরীর আমাকে আর তেমন শক্তি দিচ্ছে না।
এদিকে তার প্রতিবেশিরা তাকে ‘ইউক্রেনের উদাহরণ’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। তারা আরও বলছে, যখন তিনি এই বয়সেও বন্দুকের নলে দৃষ্টি রাখছেন তখন স্বাভাবিকভাবে তাকে অতিমানব মনে হচ্ছে।
ইউক্রেন নাগরিক এলেনা মিরকো সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, আমি তাকে চিনি, তিনি আমাদের প্রতিবেশী ছিলেন। তিনি পাশের বাড়িতে থাকতেন। তিনি একজন সুন্দরী মহিলা, তিনি ইউক্রেনের জন্য এক নতুন উদাহরণ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক আরিয়ানা জিক বলেছেন, ‘এই মহিলা আমার নায়ক।’
তবে মিসেস কনস্টান্টিনোভস্কা একমাত্র ইউক্রেনীয় মহিলা নন, যিনি দেশকে রক্ষা করার লক্ষ্যে রাস্তায় নেমেছেন।
ইউক্রেনের সবচেয়ে মারাত্মক মহিলা স্নাইপার ওলেনা বিলোজারস্কা, তার বয়স এখন ৪২। দ্যা মেইল অনলাইনকে তিনি বলেছেন, তিনি দ্রুত রাশিয়ানদের মুখোমুখি হবেন। তিনি ইউক্রেনীয় মেরিন কর্পসের অংশ।
বিলোজারস্কা বলছেন, যুদ্ধে তিনি যে সমস্ত পুরুষকে হত্যা বা আহত করেছেন তাদের সম্পর্কে তার কোনো মাথাব্যথা নেই।
তার মতে, যখন শত্রু আমাকে হত্যা করার জন্য আমাদের অবস্থানের দিকে হামাগুড়ি দেয়, তখন আমার স্বামী, বাবা-মা বা সন্তান আছে সেটা আমার মনে থাকে না।
এমন হাজার হাজার ইউক্রেনবাসী সম্প্রতি দেশটির টেরিটোরিয়াল ডিফেন্স ফোর্সেস (টিডিএফ)-এ যোগ দিয়েছেন। এটি সেনাবাহিনীর একটি স্বেচ্ছাসেবী বিভাগ যারা রাশিয়ান সীমান্তে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করছে।
টিডিএফ এর কিয়েভ শাখা জানুয়ারিতে রাজধানীর বাইরে তুষার আচ্ছাদিত বনাঞ্চলে একটি প্রশিক্ষণ অনুশীলন চালায়। যখন সারা দেশ থেকে অনেক বেসামরিক নাগরিক, বিশেষ তরুণদের অনেকেই প্রাথমিক যুদ্ধের দক্ষতা অর্জনের জন্য অনুরূপ প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামে যুক্ত হন।