কুমিল্লায় পাকস্থলীতে করে ইয়াবা পাচারকালে ৯ তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। এসময় তাদের কাছ থেকে প্রায় ২৪ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তার হওয়া সকলেই একাদশ থেকে ডিগ্রী শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। এক বছর ধরে তারা মাদক কারবারিদের নির্দেশে এ উপায়ে ইয়াবা আনা-নেয়া করছেন বলে জানিয়েছে র্যাব।
মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নগরীর শাকতলা এলাকায় র্যাব-১১ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান কোম্পানি কমান্ডার মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন।
তিনি জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার আমতলী এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করা হয়। এসময় একটি বাসে তল্লাশি করে ৯ জনকে আটক করা হয়।
পরে তাদেরকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে এক্সরে করার পর প্রত্যেকের পেটে ইয়াবার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এসময় বিশেষ পদ্ধতিতে পেটের ভিতর থেকে ২৩ হাজার ৯৯০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তার তরুণদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ময়মনসিংহের জনৈক এক বড় ভাই মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত এবং এই পদ্ধতি অনুসরণ করেই সে টেকনাফ থেকে ইয়াবা বহন করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করত।
তার গ্রুপের কয়েকজন ২০২০ সালের ডিসেম্বরে গ্রেপ্তার হয়। পরবর্তীতে সে এলাকার তরুণদের টার্গেট করে এবং প্রথমে আসামি সেলিমকে ম্যানেজ করার পর তার মাধ্যমে রিফাত, গোলাপ, রিশাদ, তোফায়েল ও আশিককে এ কাজে আসতে বাধ্য করে।
অপরদিকে জনৈক মাদক ব্যবসায়ীর মহাখালীর বন্ধুর মাধ্যমে প্রথমে আসামি সোহেলকে এবং আসামি সোহেলের মাধ্যমে আসামি মিতুল ও সিয়ামকে মাদক পরিবহনের কাজে সম্পৃক্ত করা হয়।
প্রথমে তাদেরকে গাঁজা ও ইয়াবা ফ্রিতে সরবরাহ করা হয় এবং মাদকের আসরে আমন্ত্রণ জানানোর মাধ্যমে তাদেরকে ধীরে ধীরে মাদকাসক্ত করে ফেলা হয়। পরবর্তীতে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার প্রলোভন এবং উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখানো হয়। মাদকাসক্ত হয়ে এই তরুণেরা মাদকের টাকা সংগ্রহ করার জন্য জনৈক মাদক ব্যবসায়ীর দেয়া প্রস্তাবে রাজী হয়ে যায়।
২০২১ সালের জানুয়ারিতে প্রথমবার পেটের ভেতরে করে ইয়াবা বহন করে সফলভাবে তা ডেলিভারি দিতে সক্ষম হয় তারা। তবে তাদেরকে প্রাপ্ত টাকা না দিয়ে অর্ধেক টাকা ট্যাক্স হিসেবে রেখে দেয় জনৈক মাদক ব্যবসায়ীরা।
তখন এই তরুণরা এই কাজ না করার সিদ্ধান্ত নিলে আগের কাজের ধারণকৃত ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে পুনরায় এই কাজ করতে তাদেরকে বাধ্য করা হয়।
আটকরা জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, মাদক কারবারিদের নির্দেশে তাদের আব্দুল্লাপুরের একটি বাস কাউন্টারে যেতে বলা হয়। সেই কাউন্টারে আগে থেকেই তাদের জন্য কক্সবাজার জেলার টেকনাফগামী বাসের টিকিট কেটে রাখা হয়।
বাস টেকনাফ গিয়ে থামলে সেখানে থাকা জনৈক মাদক কারবারি তাদের একটি আবাসিক হোটেলে নিয়ে যায়। এবং হোটেলের যে কক্ষে তাদের রাখা হয় সে কক্ষটি সারাদিন বাইরে থেকে তালা মেরে রাখা হয়।
সন্ধ্যা নাগাদ জনৈক মাদক কারবারির দুই-তিনজন লোক হোটেলে এসে ঐ তরুণদের সাথে দেখা করে এবং ইয়াবা পেটে চালান করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে।
এক্ষেত্রে প্রথমে কলার রস দিয়ে খেজুরের মতন ছোট ছোট পলিথিনে মোড়ানো ইয়াবার পোটলাগুলো পিচ্ছিল করে তারা গিলে ফেলে।
এরপর নাইটকোচে তারা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করেন। পথে সার্বক্ষণিক মাদক কারবারিরা তাদেরকে নির্দেশনা দিতে থাকে।
মাদক কারবারিদের নির্দেশনা অনুযায়ী ইয়াবাগুলো কখনো নরসিংদী, কখনো আশুলিয়া আবার কখনো মহাখালীতে নির্ধারিত স্পটে মাদক কারবারিদের কাছে পৌঁছে দিতে হয়।
তারা আরো জানান, গত এক বছরে অসংখ্যবার তারা এ প্রক্রিয়ায় টেকনাফ থেকে ঢাকায় ইয়াবা এনেছেন। পারিবারিক দৈন্যদশা, বেকারত্ব, ও মানসিক অবসাদের কারণে মাদক কারবারিদের ব্ল্যাকমেইলিংয়ের ফাঁদে পা দিতে হয়েছে বলে দাবি তাদের।
তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় এমন আরো কয়েকটি তরুণ শিক্ষার্থীদের গ্রুপ এ পন্থায় মাদক কারবারিদের নির্দেশনায় ইয়াবা আনা নেয়া করে থাকেন।
আসামিদের বিরুদ্ধে কুমিল্লা জেলার কোতোয়ালি থানায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।