ভারতীয় সংগীতশিল্পী বাপ্পি লাহিড়ি। মঙ্গলবার মধ্যরাতে মুম্বাইয়ের জুহুর ক্রিটি কেয়ার হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
বাপ্পি লাহিড়ির অকাল প্রয়াণে শোকের মাতম বইছে গোটা ভারত জুড়ে। বাপ্পির সঙ্গে ছবি দিয়ে শোক জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মোদি টুইট করে লেখেন, বাপ্পি লাহিড়ির সমস্তটা জুড়ে ছিল সংগীত, নানা ধরনের আবেগকে তিনি অসাধারণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। প্রজন্মের পর প্রজন্ম তার কাজ মনে রাখবে। প্রাণবন্ত স্বভাবের জন্য তার অভাব বোধ করবে। তার মৃত্যুতে শোকাহত। পরিবার ও অনুরাগীদের প্রতি সমবেদনা। ও শান্তি।
পাশাপাশি বাপ্পি লাহিড়ির মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শা ও। তিনি টুইট করে লেখেন, কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী-সুরকার বাপ্পি লাহিড়ির মৃত্যুতে শোকাহত। তার প্রয়াণ ভারতীয় সংগীত জগতের অপূরণীয় ক্ষতি। বহুমুখী প্রতিভা ও প্রাণবন্ত স্বভাবের জন্য বাপ্পিদা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। পরিবার ও অনুরাগীদের প্রতি সমবেদনা। ও শান্তি।
শোকপ্রকাশ করে বিজেপি নেত্রী রুপা গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছেন, তিন নক্ষত্র চলে গেলেন।
৬৯ বছর বয়সী প্রখ্যাত এ শিল্পী গত একমাস ধরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সোমবার ছেড়েও দেওয়া হয়েছিল তাকে। তবে গতকাল অবস্থার ফের অবনতি হওয়ায় তাকে আবারো নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ায় মৃত্যু বাপ্পি লাহিড়ির মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
গানের পাশাপাশি রাজনীতিতেও উৎসাহী ছিলেন বাপ্পি লাহিড়ি। ২০১৪ সালে শ্রীরামপুর লোকসভায় বিজেপির হয়ে ভোটে দাঁড়িয়ে তৃণমূলের কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে হেরে যান তিনি।
১৯৫২ সালের ২৭ নভেম্বর জলপাইগুড়িতে জন্মগ্রহণ করেন বাপ্পি। তার পর দীর্ঘদিন বাংলা ও হিন্দি ছবির গান গেয়েছেন। সুর দিয়েছেন। শরীরে প্রচুর সোনার গয়না পরতে ভালোবাসতেন। ছিল গায়কির নিজস্ব কায়দা, যা তাকে হিন্দি ছবির জগতে অনন্য় পরিচিতি দিয়েছিল। পেয়েছেন একাধিক পুরস্কার এবং সম্মান।
বাপ্পি লাহিড়ি রাজনীতিতেও নেমেছিলেন। বিজেপি-তে যোগ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের শ্রীরামপুর কেন্দ্র থেকে ভোটেও লড়েছিলেন। কিন্তু রাজনীতিতে কখনওই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেননি বাপ্পি।
বাপ্পি লাহিড়ি পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় শাস্ত্রীয় সংগীতে সমৃদ্ধ এক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাক নাম আলোকেশ বাপ্পি লাহিড়ি। বাবা অপরেশ লাহিড়ি ছিলেন একজন বাংলা সংগীতের জনপ্রিয় গায়ক। মা বাঁশরী লাহিড়িও ছিলেন একজন সংগীতজ্ঞ ও গায়িকা যিনি শাস্ত্রীয় ঘরাণার সংগীত এবং শ্যামা সংগীতে বিশেষ পারঙ্গমতা দেখিয়েছিলেন। তাদের পরিবারেরই একমাত্র সন্তান বাপ্পি লাহিড়ি।
৩ বছর বয়সেই তবলা বাজাতে শুরু করেন বাপ্পি। তার মায়ের আত্মীয় হিসেবে ছিলেন – বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী কিশোর কুমার এবং এস মুখার্জী। বাবা-মায়ের সান্নিধ্যে থেকেই তিনি সংগীতকলায় হাতে খড়ি ও প্রশিক্ষণ নেন। এরপর তিনি ১৯ বছর বয়সে দাদু (১৯৭২) নামক বাংলা চলচ্চিত্রে প্রথম কাজ করেন।