সংগীত জগতে আবারও নক্ষত্রের পতন। না-ফেরার দেশে চলে গেলেন বর্ষীয়ান সুরকার-গায়ক বাপ্পী লাহিড়ী। মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কিংবদন্তি এ গায়ক ও সুরকার। তার বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর।
শুধু গানে নয়, ব্যক্তিত্বেও অন্যদের চেয়ে আলাদা ছিলেন বাপ্পী লাহিড়ী। সবসময় অনেক গয়না পরে থাকতেন তিনি। গলায় মোটা স্বর্ণের চেইন, ব্রেসলেট, আংটিতে ভরে থাকত তার শরীর। এ কারণে তাকে বলা হতো বলিউডের ‘গোল্ডেন ম্যান’।
তবে অনেকের মনেই প্রশ্ন ছিল, এত গয়না কেন পড়তেন বাপ্পী লাহিড়ী? যদিও জীবিত থাকাবস্থায়ই এ প্রশ্নের উত্তর দিয়ে গেছে তিনি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাপ্পী লাহিড়ী বলেছিলেন, ‘আমি মার্কিন মিউজিশিয়ান এলভিস প্রেসলির দ্বারা অনুপ্রাণিত। তাই গয়নার প্রতি একটা অন্যরকম ভালোবাসা কাজ করে আমার।’
তিনি আরও বলেন, ‘এলভিস প্রেসলি সোনার হার পরতেন। আমি তার বড় ভক্ত ছিলাম। ভাবতাম, যদি কোনোদিন সফল হই, তাহলে নিজের অন্যরকম ভাবমূর্তি গড়ে তুলব। আগে লোকে ভাবত, আমি সবাইকে দেখানোর জন্যই সোনার গয়না পরি। কিন্তু সেটা ঠিক নয়। সোনা আমার কাছে পয়া। আমার এগিয়ে যাওয়ার সাহস।’
গত বছর এপ্রিলে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন এ শিল্পী। তারপর থেকেই শয্যাশায়ী ছিলেন বাপ্পী। এ ছাড়া একাধিক রোগে ভুগছিলেন বর্ষীয়ান এ শিল্পী। শারীরিক অসুস্থতা বেড়ে গেলে আবারও তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বাপ্পী লাহিড়ী। মধ্যরাতের কিছু আগে ওএসএর (অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া) কারণে তিনি মারা যান।
১৯৭০ থেকে ৮০-এর দশকে হিন্দি ছায়াছবির জগতে অন্যতম জনপ্রিয় নাম বাপ্পী লাহিড়ী। ‘ডিস্কো ডান্সার’, ‘চলতে চলতে’, ‘শরাবি’-তে সুর দিয়েছেন। গেয়েছেন একাধিক গান। ২০২০ সালে তার শেষ গান বাগি-৩-এর জন্য। কিশোর কুমার ছিলেন বাপ্পীর সম্পর্কে মামা। বাবা অমরেশ লাহিড়ী ও মা বাঁশরী লাহিড়ী দুজনেই সংগীত জগতের মানুষ। ফলে একমাত্র সন্তান বাপ্পী ছেলেবেলা থেকেই গানের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন। মা-বাবার কাছেই পান প্রথম গানের তালিম।
১৯৫২ সালের ২৭ নভেম্বর জলপাইগুড়িতে জন্মগ্রহণ করেন বাপ্পী। তার পর দীর্ঘদিন বাংলা ও হিন্দি ছবির গান গেয়েছেন। সুর দিয়েছেন। শরীরে প্রচুর সোনার গয়না পরতে ভালোবাসতেন। ছিল গায়কির নিজস্ব কায়দা, যা তাকে হিন্দি ছবির জগতে অনন্য় পরিচিতি দিয়েছিল। পেয়েছেন একাধিক পুরস্কার ও সম্মাননা।