কাবা পৃথিবীর কেন্দ্রে অবস্থিত কি না, এ নিয়ে অনেক মতবিরোধ রয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, যেহেতু পৃথিবী গোলাকার, সেহেতু পৃথিবীর কেন্দ্র বলে আপাতদৃষ্টিতে কিছু নেই। তাই কাবা পৃথিবীর কেন্দ্রে অবস্থিত নয়। আবার কেউ কেউ বলছেন, কাবার অবস্থান পৃথিবীর কেন্দ্রে না হলেও ‘ভৌগোলিক কেন্দ্রে’ হওয়ার একটি সম্ভাবনা রয়েছে।
পৃথিবীর কেন্দ্র ত্রিমাত্রিক একটি কনসেপ্ট হলেও ‘ভৌগোলিক কেন্দ্র’ একটি দ্বিমাত্রিক কনসেপ্ট। এই বিন্দুকে দ্বিমাত্রিক পৃথিবীর ভরকেন্দ্র হিসেবে কল্পনা করা যায়। আর এই বিন্দুটি কোথায় হবে, তা পৃথিবীর ভরের ডিস্ট্রিবিউশনের ওপর নির্ভরশীল। এখানে আরও বিস্তারিত জানতে পারবেন: Geographical Centre
এটি হিসাব করা বেশ কষ্টসাধ্য একটি কাজ। তবে হাইজেনবার্গ হিসাব করে দেখিয়েছেন যে, এটি তুরস্কের একটি স্থানে অবস্থিত। অপরদিকে আরেকজন বিজ্ঞানীর হিসাবমতে, এটি মিসরের কোনো এক স্থানে অবস্থিত। সব পর্যবেক্ষণেই দেখা গেছে, পৃথিবীর ভৌগোলিক কেন্দ্র হিসেবে যত স্থান পাওয়া গিয়েছে, তার কোনোটিই মক্কা থেকে বেশি একটা দূরে নয়। আবার প্রাপ্ত ফলাফলগুলো যে শতভাগ সঠিক, তা-ও বেশ জোর দিয়ে বলা যায় না।
তাই কাবা যেমন পৃথিবীর ভৌগোলিক কেন্দ্রে অবস্থিত প্রমাণ হয়নি, তেমনি কাবা যে পৃথিবীর ভৌগোলিক কেন্দ্রে অবস্থিত নয়–সেটিও জোর দিয়ে বলা যায় না।
মুসলমানদের কিবলা পবিত্র কাবাঘর। কাবাঘর আল্লাহর আরশে মুয়াল্লার ছায়াতলে সোজাসুজি সপ্তম আসমানে অবস্থিত মসজিদ বাইতুল মামুরের আকৃতি অনুসারে ভিত্তিস্থাপন করা হয়। আল্লাহতায়ালা কাবাগৃহকে মানবজাতির ইবাদতের কেন্দ্রস্থলরূপে নির্দিষ্ট করেন। হজের মৌসুমে প্রতিবছর লাখ লাখ মুসলমান কাবাঘর তওয়াফ করতে মক্কায় গমন করেন।
এই বায়তুল্লাহ নির্মাণে সুদূরপ্রসারী এক ইতিহাস রয়েছে। ইতিহাসবেত্তারা বলেন, পবিত্র ও সম্মানিত কাবা শরিফের নির্মাণ ও সংস্কারকাজ বিভিন্ন যুগে বিভিন্নভাবে সম্পাদিত হয়েছে। তাফসিরবিদ মুজাহিদ বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বায়তুল্লার স্থানকে সমগ্র ভূপৃৃষ্ঠ থেকে দুই হাজার বছর আগে সৃষ্টি করেন। মুসলিম শরিফের এক হাদিসে হজরত আবুজর গিফারি (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, বিশ্বের সর্বপ্রথম মসজিদ হলো মসজিদে হারাম তথা বায়তুল্লাহ।
বেহেশত থেকে দুনিয়ায় পাঠানোর পর আদি মানব-মানবী হজরত আদম (আ.) ও হজরত হাওয়া (আ.) ইবাদতের জন্য একটি মসজিদ প্রার্থনা করেন। আল্লাহতায়ালা তাদের দোয়া কবুল করে কাবাগৃহকে ইবাদতের কেন্দ্র হিসেবে নির্ধারণ করে দেন। এরপর হজরত নূহ (আ.)-এর যুগের মহাপ্লাবনে কাবা শরিফ ধসে যায়। পরে আল্লাহর হুকুমে হজরত ইবরাহিম (আ.) তার পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)-কে সঙ্গে নিয়ে কাবাগৃহের পুনর্নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেন। আল্লাহতায়ালার নির্দেশে আল্লাহর ঘর পবিত্র কাবা শরিফের নির্মাণ হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর জীবনের অমর কীর্তি ও অন্যতম অবদান।
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তি পবিত্র কাবাঘর পুনর্নির্মাণের সৌভাগ্য অর্জন করলেও একমাত্র হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর নির্মাণের কথা আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে কারিমের অংশ বানিয়ে কিয়ামত পর্যন্ত মুসলিম উম্মাহর জন্য সংরক্ষিত করেছেন।
হজরত ইবরাহিম (আ.) কর্তৃক বায়তুল্লাহ নির্মিত হওয়ার পর থেকে সব যুগেই তার জিয়ারতও অব্যাহত ছিল। শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর সে দোয়ারই ফসল, যা তিনি বায়তুল্লাহ নির্মাণকালে করেছিলেন। এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি আমার বাবা ইবরাহিম (আ.)-এর দোয়া এবং আমার ভাই ঈসা (আ.)-এর সুসংবাদ।’ (মুস্তাদরাকে হাকেম)
ইসলামের ইতিহাসে ৬৩১ খ্রিষ্টাব্দে নবম হিজরিতে হজ্জের বিধান ফরজ হয়। পরের বছর ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে মহানবী (সা.) হজ আদায় করেন। তিনি যেখানে, যে সময়ে, যে তারিখে, যে নিয়মে যেসব আহকাম-আরকান পালন করেন, প্রতিবছর ৮-১৩ জিলহজ মক্কা মুকাররমা এবং এর আশপাশের এলাকাজুড়ে নির্দিষ্ট নিয়মে সেভাবেই পবিত্র হজ পালিত হয়ে আসছে।
মুসলিম মানবজাতির ইবাদতের কেন্দ্রস্থল কাবা শরিফ পৃথিবীর ঠিক কেন্দ্রতেই অবস্থিত বলে অনেকেই মনে করেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে জ্ঞানবিজ্ঞানের প্রসারের ফলে এই বিষয়টি নিয়ে নানা অভিমত রয়েছে। পবিত্র কোরআন কিংবা বিজ্ঞানীদের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা, কোনো কিছুতেই এখনো সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।