ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, রুশপন্থী বিদ্রোহীদের সাথে গোলাগুলিতে তাদের এক সেনা মারা গেছে। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় মোট ৬৬ দফা যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে বিদ্রোহীরা। ভারী কামান ব্যবহার করে ইউক্রেনের মোট ২০টি বসতিতে গোলা বর্ষণ করেছে বিদ্রোহীরা।
আর, পূর্ব ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চলের রুশপন্থী বিদ্রোহীদের দাবি, ইউক্রেন তাদের ওপর মর্টার হামলা বাড়িয়ে দিয়েছে।
তবে ইউক্রেন দাবি করেছে, এটি রাশিয়ার গায়ে পড়ে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা ছাড়া কিছু নয়। কোন ধরনের আভাস ছাড়াই হামলা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, পূর্ব ইউক্রেনে রাশিয়া-ইউরোপের দুইটি তেল পাইপলাইন ‘রহস্যজনক’ বিস্ফোরণে উড়ে গেছে। ওই এলাকায় টানা দুই দিন ধরে ইউক্রেন সেনা ও বিদ্রোহীদের মধ্যে গোলাগুলি চলছে। আতঙ্কে বাড়িঘর ছেড়ে রাশিয়ায় আশ্রয় নিচ্ছে মানুষ।
চলমান পরিস্থিতিতে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে ‘আগ্রাসন চালানোর সিদ্ধান্ত’ নিয়ে ফেলেছেন, বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
পূর্ব ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদী অঞ্চল লুহানস্কে হামলায় বিধ্বস্ত হয় শিশুদের স্কুল। হামলায় বাদ যাচ্ছে না আবাসিক স্থাপনাও। টানা দু’দিন ধরে রুশপন্থী বিদ্রোহী ও ইউক্রেন সেনাদের পাল্টাপাল্টি এসব হামলায় বাড়ছে যুদ্ধের উত্তেজনা।
শুক্রবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) লুহানস্কে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা শহরের মধ্য দিয়ে যাওয়া একটি আন্তর্জাতিক তেল পাইপলাইন বিস্ফোরণে উড়ে গেছে। তবে এতে হতাহতের খবর মেলেনি। ওই পাইপলাইন দিয়ে রাশিয়া থেকে পূর্ব ও মধ্য ইউরোপের বিভিন্ন প্রান্তে তেল সরবরাহ করা হতো।
দ্বিতীয় বিস্ফোরণটি একটি গ্যাস স্টেশনে ঘটেছে। এর আগে নিকটস্থ দোনেস্ককে বিস্ফোরণের খবর জানিয়েছিল স্থানীয় গণমাধ্যম। এই পরিস্থিতিতে, লুহানস্কে সরকারের পরামর্শে প্রাণ বাঁচাতে প্রতিবেশী রাশিয়ায় চলে যাচ্ছেন বাসিন্দারা। যতদ্রুত সম্ভব এলাকা ছাড়ছে মানুষ।
এসব লোকদের আশ্রয় দিতে প্রস্তুত রাশিয়াও। ইউক্রেন থেকে মানুষের আশ্রয়, খাওয়া-দাওয়া ও নিরাপত্তার পাশাপাশি ১০ হাজার রুবল করে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে রুশ সরকার।
চলমান উত্তেজনার মধ্যেই সামরিক মহড়া পর্যবেক্ষণ করবেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সামরিক কমান্ড, সেনা, যুদ্ধজাহাজ এবং ক্ষেপণাস্ত্র কতোটা প্রস্তুত, তা পরীক্ষা করা হবে মহড়ায়।
এসব দেখে পুতিন ‘হামলার সিদ্ধান্ত’ নিয়েছেন বলে নিশ্চিত হয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। মার্কিন গোয়েন্দা তথ্যও নাকি একই কথা বলছে।
বাইডেন বলেন, রুশ বাহিনীগুলো যে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ইউক্রেনে হামলার পরিকল্পনা এবং প্রস্তুতি নিচ্ছে, সেটা বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে। আমি এখন নিশ্চিত, পুতিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ হতে পারে রুশ হামলার লক্ষ্যবস্তু।
যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, ইউক্রেন সীমান্তের কাছে ১ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ১ লাখ ৯০ হাজার সেনা সমাবেশ ঘটিয়েছে মস্কো।
এরমধ্যে ইউক্রেনের দোনেস্ক ও লুহানস্ক রুশ সমর্থিত যোদ্ধারাও আছে। এরা সবাই অ্যাটাকিং পজিশনে আছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এত বড় সেনা-সমাগম আর দেখেনি ইউরোপ। তবে এখনও যুদ্ধ শুরুর আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে মস্কো।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও দাবি করছেন, ডনবাস অঞ্চলে পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। তবে ইউক্রেন ও মিত্রদের দাবি, বিদ্রোহীদের ওপর কোনো হামলা চালানো হচ্ছে না। এগুলো ওই অঞ্চলে রাশিয়ার সেনা পাঠানোর অজুহাত তৈরির চেষ্টা।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন দাবি করেছেন, এসব করে যুদ্ধের প্ররোচণা দিচ্ছে রাশিয়া।
অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, রাশিয়ার ভেতরে সাজানো সন্ত্রাসী বোমা হামলা, গণকবরের আবিষ্কার, বেসামরিক লোকজনের ওপর সাজানো ড্রোন হামলা এমনকি রাসায়নিক অস্ত্রের মাধ্যমে হামলা চালিয়ে অজুহাত তৈরি করতে পারে মস্কো।
ন্যাটোর প্রধান জেনস স্টলটেনবার্গ, যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রস ও প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও রাশিয়ার আক্রমণের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলেছেন।