ভালো ক্রিকেটারের বড় গুণ ম্যাচের অবস্থা বুঝে খেলা। পরিস্থিতি কি চাচ্ছে সে অনুযায়ী খেলতে পারে না- টাইগার্সদের বিরুদ্ধে অনেক পুরনো এক সমালোচনা। বিপিএলের ফাইনালে হারের পর আবার সেই অভিযোগ উঠছে। জয়ের মতো অবস্থান থেকে এক রানের হার কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না ফরচুন বরিশালের কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন। বিপিএলে এই নিয়ে টানা চারবার রানার্স আপ হলো সুজনের দল। হতাশ সুজন বলছেন, বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের উন্নতির গতি অনেক ধীর, সেই সঙ্গে তাদের গেম সেন্স খুবই নিম্নমানের।
সাকিব, ব্রাভোদের মত পারফর্মারদের দলে নিয়েও জয়ের কাছে গিয়ে এক রানের হারে শিরোপাস্বপ্ন বিসর্জন দিতে হয়েছে ফরচুন বরিশাল দলকে। দলের কোচ সুজন এমন হার মেনে নিতে পারছেন না। টানা চারবার রানার্স আপ হওয়ায় ভাগ্যকেও দুষছেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে স্বীকারও করে নিলেন, ‘রানার্সআপের ধারাবাহিকতা বেশি হয়ে যাচ্ছে। আমি রানার্সআপ কোচ হয়ে যাচ্ছি!’
হারের কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে সুজন আবার তুলে ধরলেন বাংলাদেশ দলের পুরনো দুর্বলতার কথাই। বাংলাদেশ জাতীয় দলের ‘টিম ডিরেক্টর’ সুজনের মতে, কালকের ফাইনাল এবং এবারের বিপিএল দেখে মনে হয়েছে, খেলায় কখন, কীভাবে পরিস্থিতি বুঝে খেলতে হবে, সেই ‘গেম সেন্সে’ বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের বড় ঘাটতি এখনো রয়েই গেছে।
ফাইনালে সুনিল নারাইন দারুণ সূচনা এনে দেন কুমিল্লাকে। সেখান থেকে বাকি ব্যাটাররা পরিস্থিতি বিবেচনা না করে খেলায় কুমিল্লা খুব বড় সংগ্রহ তুলতে পারেনি স্কোরবোর্ডে। দারুণ শুরু করা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসকে শেষ পর্যন্ত ১৫১ রানে আটকে দেয় বরিশাল। পরে জবাব দিতে নেমে বরিশালের শুরুটাও ভালোই হয়েছিলো। তারপর যেন সেই কুমিল্লার ইনিংসের পুনরাবৃত্তি।
২ উইকেট হারিয়েই ১০০ রান সংগ্রহ করে ফেলার পর ম্যাচ হারার পেছনে কোন ধরণের যুক্তি খুঁজে পাচ্ছেন না জাতীয় দলের সাবেক অলরাউন্ডার সুজন।
তিনি বলেন, ‘২ উইকেটে ১০০-র বেশি রান, ওখান থেকে তো ম্যাচ হারার কোনো কারণই আমি দেখি না। আমাদের ব্যাটিংটা আমরা ভালো দেখাতে পারিনি। শেষ দিকটা ভালো হয়নি। আমরা প্যানিক করেছি। আপনি যদি শেষের দিকে গিয়ে ৬ রানরেট তাড়া করতে না পারেন, তাহলে এটা তো খুবই জঘন্য ব্যাপার।’
দলের অভিজ্ঞতার অভাবে এমন ভরাডুবি কিনা – এমন প্রশ্নে বিরক্ত সুজন জানান, দলের বেশিরভাগেরই আছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা। ঘরোয়া লিগেও খেলেছে অনেকদিন, সুতরাং অনভিজ্ঞতার দোহাই দেওয়ার জায়গা নেই। খেলার মাঠে বরিশালের ক্রিকেটারদের মাথায় কি চলছিলো তাই ভেবে পাচ্ছেন না সুজন। ম্যাচ শেষ করে না আসতে পারায়ু হতাশ সুজন আরো বলেন, আমরা শেষ দুই ওভারে একটা বাউন্ডারিও মারতে পারিনি। আপনাকে খেলাটা শেষ করতে জানতে হবে। আমি সত্যি বলতে, অনেক বিরক্ত…হতাশ। আমি তেমন উন্নতি তো দেখছি না ছেলেদের। আমি জানি ওরা মানসম্পন্ন খেলোয়াড়, কিন্তু মাঠে সেটা প্রমাণ করতে না পারলে আর কী প্রমাণ করল!’
মাঠে প্লেয়ারদের কাছে কোন নির্দেশনা গিয়েছিলো কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে সুজন বলেন, মাঠ থেকে নানা ধরণের নির্দেশনাই যায়।প্লেয়ারকে বুঝতে হবে কার বলে মারতে হবে আর কার বলে মারলে উইকেট হারাতে হবে। এতোটুকু না বুঝতে পারাটাকে সুজন বলছেন ক্রিকেটারদের ক্রিকেটবোধের অভাব।
বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা শিখলেও সেটির গতি অনেক কম বলে মনে করেন সুজন। বলে বলে ঝাঁপিয়ে একটা রান বা বাউন্ডারি বাঁচানো, ওয়াইড কম দেওয়ার মতো ছোট ছোট কাজও যে টি-টোয়েন্টিতে শেষ পর্যন্ত জয়-হারের ব্যবধান গড়ে দিতে পারে, তা তো উদাহরণ হয়েই কাল ফাইনালে দেখিয়ে দিয়ে গেল বরিশালের তারকাদের। একটি রানই ঠিক করে দিলো ম্যাচের পরিণতি।