আমার দাদা কর্নেল নাদের আলী। জীবন সায়াহ্নে প্রায়ই ১৯৭১ নিয়ে গল্প করতেন তিনি। ১০ এপ্রিল তাকে ঢাকায় মোতায়েন করা হয়েছিল। অক্টোবরের আগ পর্যন্ত তৃতীয় কমান্ডো ব্যাটালিয়নে প্রথমে দ্বিতীয়, পরে প্রথম কমান্ডে দায়িত্ব পালন করেছেন। এরপর পদোন্নতি দিয়ে তাকে পশ্চিম পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
ঢাকা ছেড়ে চলে আসার দিন সকালে তিনি উর্দি ছেড়ে ঐতিহ্যবাহী ধুতি পরে রাঙামাটি লেকের পাড়ে আনমনে হাঁটছিলেন। ছোট্ট একটি নৌকায় উঠে বিস্মিত মাঝির ডাল-ভাতে ভাগ বসান। এ ঘটনার বিবরণ দেওয়ার সময় একজন দখলদার কর্মকর্তা না, বরং নিজেকে স্থানীয় বাসিন্দা হিসেবেই অনুভব করতেন দাদা। তার চোখে-মুখে সেই অনুভূতি ফুটে উঠতে দেখেছি।
কাঁধ ঝাঁকিয়ে দাদা বলতেন, ‘আমি আর নিজের মধ্যে নেই। পাগল হয়ে গেছি।’ বিভিন্ন অদ্ভূত কাহিনী থেকেই শুরু হয়ে যায় তার মানসিক বিপর্যয়। চিকিৎসা নিতে অন্তত ছয় মাস তাকে হাসপাতালে কাটাতে হয়েছে। স্মৃতিশক্তিও সাময়িক নষ্ট হয়ে যায়। সময় হওয়ার আগেই সামরিক বাহিনী থেকে তাকে অবসর নিতে হয়েছে।
‘আপনি কী ভয় পেয়েছিলেন?’ তাকে একবার প্রশ্ন করেছিলাম। তার জীবনের অভিজ্ঞতা ও মর্মান্তিক কাহিনী বুঝতেই ছিল এই জিজ্ঞাসা। ভীতি, মানসিক যন্ত্রণা ও সহিংসতার কথা মাথায় রেখে তার স্মৃতিশক্তি নষ্ট হয়ে যাওয়া ও যুদ্ধ- দুটোই উপলব্ধি করতে চেয়েছিলাম।
কখন সবুজ ফসলের মাঠে আমরা চোখ জুড়াব
রক্তের দাগ ধুয়ে নিতে আর কত বৃষ্টি লাগবে?’
পাকিস্তিানের জন্য একাত্তরের বেদনাদায়ক ঘটনাকে বুঝতে কেবল সহিংসতা ও বর্বরতার হিসাব করলেই হবে না, বরং যা কিছু হারিয়েছে, তার সবকিছুই আমলে নিতে হবে।