জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভায় দেওয়া ভাষণে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রি কুলেবা দেশটির বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্ববাসীর প্রতি ‘দ্রুত ও দৃঢ় পদক্ষেপ’ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, বিশ্ব ইতিহাসে আমরা এক নজিরবিহীন সংকটের মুখোমুখি হয়েছি। বিশ্ববাসী হয়তো দশকের পর দশক ধরে এই ঘটনা স্মরণ করবে।
স্থানীয় সময় বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অন্যান্য বিশ্বযুদ্ধের সময় রাজনীতিবিদরা যে ভুলগুলো করেছিলেন সেই ভুলগুলোর জন্য আমরা সবাই ভুগেছি। আমি অনুরোধ করব যেন অতীতের ভুলগুলোর পুনরাবৃত্তি না হয় যা বিশ্বযুদ্ধের সূচনা করবে।
কুলেবা আরও বলেন, রাশিয়ার অভিযোগ যে ইউক্রেন উত্তেজনা বাড়াচ্ছে, কিন্তু তা অযৌক্তিক। বরং রাশিয়ার বক্তব্য আক্রমণাত্মক ও ভয়ংকর এবং এটি নজিরবিহীন হুমকি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে রাষ্ট্র হিসেবে ইউক্রেনের অস্তিত্ব অস্বীকার করে পুতিনের বক্তব্য প্রদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কেউ যদি মনে করে যে আমরা (ইউক্রেন) অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করছি, তবে তাদের পুতিনের এই ভয়ংকর বক্তব্য দেখা উচিত।
প্রসঙ্গত, পূর্ব ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদী-অধ্যুষিত দোনেস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সেখানে সেনা পাঠিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এমন পরিস্থিতিতে ইউক্রেনজুড়ে জরুরি অবস্থা জারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ।
তবে ইউক্রেনের দুটি অঞ্চলকে স্বাধীন স্বীকৃতি দেওয়ায় পশ্চিমাদের তীব্র রোষানলে পড়েছে রাশিয়া। দেশটির ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। পূর্ব ইউক্রেনে মস্কোর সেনা মোতায়েন আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করলেও রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোর কোনো ইচ্ছা যুক্তরাষ্ট্রের নেই বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এরমধ্যেই, রুশ-ইউক্রেন উত্তেজনায় টালমাটাল হয়ে পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতি।
এদিকে, ইউক্রেনের বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলকে রাশিয়ার স্বীকৃতিতে অস্থির হয়ে পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তেলের দাম। এ পরিস্থিতিতে দুদেশের মধ্যে যুদ্ধ শুরু বেধে গেলে তেল ও গ্যাসের দাম রেকর্ড বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অস্থিরতা দেখা দিয়েছে পুঁজিবাজারসহ বিশ্ব অর্থনীতির অন্যান্য খাতেও। এমনকি রাশিয়া প্রধান কৃষিপণ্য উৎপাদনকারী দেশ হওয়ায় খাদ্যপণ্যের সঙ্কট সৃষ্টি হতে পারে এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।