রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেছেন, ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী যদি আত্মসমর্পণ করে, তবে মস্কো আলোচনার জন্য প্রস্তুত। নিপীড়ন থেকে দেশটিকে মুক্তি দিতেই অভিযান চালানো হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।
শুক্রবার মস্কোতে (২৫ ফেব্রুয়ারি) এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে লাভরভ বলেন, ইউক্রেনকে নাৎসিমুক্ত, নিপীড়নমুক্ত ও নিরস্ত্রীকরণ করতে বিশেষ সামরিক অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে ইউক্রেনের নাগরিকেরা নিজেরাই তাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারবেন।
তার মন্তব্য থেকে পরিষ্কার যে, ইউক্রেনের সরকারের পতন ঘটাতে চায় মস্কো। লাভরভ বলেন, ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে অস্ত্র সমর্পণ করলেই যে কোনো মুহূর্তে আমরা আলোচনা টেবিলে বসতে প্রস্তুত রয়েছি।
তিনি মন্তব্য করেন, পুতিনের অভিযানের লক্ষ্য প্রকাশ্যে ঘোষণা করা হয়েছে। তা হচ্ছে, নিরস্ত্রীকরণ করা ও নাৎসিমুক্ত করা। কেউ ইউক্রেনকে দখল করতে চায় না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
রাশিয়া একটি গণতান্ত্রিক দেশে হামলা চালাতে পারে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে লাভরভ ইউক্রেনকে গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানান।
তিনি বলেন, সাবেক যুগোস্লাভিয়া, ইরাক ও লিবিয়ায় পশ্চিমা দেশগুলো আগ্রাসন চালিয়েছিল। গণতন্ত্রের নামে এসব আগ্রাসনে হাজারও নিরস্ত্র মানুষের প্রাণ গেছে। পশ্চিমারা ইউক্রেনের হাতেও অস্ত্র তুলে দিয়েছে। তাই রাশিয়া দেশটিকে নিরস্ত্র করবে। ইউক্রেনের সেনাদের অস্ত্র ত্যাগ করতে হবে।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, বেলারুশের রাজধানী মিনস্কে ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনা করতে প্রস্তুত রয়েছে রাশিয়া। কিন্তু তার মতে, এই আলোচনা হবে একটি নিরপেক্ষ অবস্থান ঘোষণার মধ্য দিয়ে, যাতে ইউক্রেনকে নিরস্ত্রীকরণও অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
ইউক্রেন যাতে কখনো ন্যাটোতে যুক্ত হতে না-পারে, তা-ই চেয়ে আসছে রাশিয়া। এদিকে রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট আলোচনার প্রস্তাব দিলেও এসব শর্তে রাজি হবেন কি না, তাতে সেই আভাস দেননি তিনি।
আলোচনার জন্য মিনস্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সেখানে এর আগে ২০১৪ সালে দুপক্ষের মধ্যে একটি চুক্তি সই হয়েছে। কিন্তু ইউক্রেনের হামলার মাধ্যমেই সেই চুক্তি পুরোপুরি অস্বীকার করা হয়েছে।
দিকে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ইউক্রেনের সঙ্গে উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠকে বসতে চায় রাশিয়া। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এমন খবর দিয়েছে।
রুশ সামরিক বাহিনীর ভয়াবহ হামলার পরেও তার নিন্দা কিংবা হামলাকে ‘আগ্রাসন’ বলতে অস্বীকার জানিয়েছে চীন। শি জিনপিংকে পুতিন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো দীর্ঘদিন ধরে রাশিয়ার বৈধ নিরাপত্তা উদ্বেগ অস্বীকার করে আসছে। বারবার তারা অঙ্গীকার লঙ্ঘন করেছে।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো পূর্বমুখী সামরিক সম্প্রসারণ করেছে। এতে রাশিয়ার কৌশলগত গুরুত্ব হুমকিতে পড়েছে।
তবে ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠকে রাজি হয়েছেন পুতিন। সংলাপের মাধ্যমে ইউক্রেন সংকটের অবসানের আহ্বান জানিয়ে আসছে চীন।
এছাড়া সবপক্ষকে ঠাণ্ডাযুদ্ধকালীন মানসিকতা ত্যাগ করে সব দেশের নিরাপত্তা উদ্বেগ, ভারসাম্যপূর্ণ, কার্যকর ও টেকসই ইউরোপীয় নিরাপত্তা কৌশল নিধারণের আহ্বান জানিয়েছেন শি জিনপিং। বিবৃতিতে তিনি বলেন, চীন সব দেশের ভূখণ্ডগত অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে।