ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর উচিত দেশের ক্ষমতা নিয়ে মস্কোর সঙ্গে আলোচনায় বসা বলে মন্তব্য করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এমন মন্তব্য করেছেন।
এ সময়ে রাশিয়ার বেসামরিক নাগরিকদের ‘মানবঢাল’ হিসেবে ব্যবহারের জন্য নতুন নাৎসি ও কিয়েভ সরকারকে দায়ী করেন তিনি।
পুতিন বলেন, ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর উচিত না—তাদের শিশু, স্ত্রী ও প্রিয়জনদের ‘মানবঢাল’ হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া। প্রতিবেশী দেশের সামরিক বাহিনীকে উদ্দেম্য করে তিনি বলেন, নিজের হাতে ক্ষমতা নিয়ে নেও।
তার মতে, একদল ‘মাদকাসক্ত ও নতুন নাৎসির’ চেয়ে আলোচনার জন্য সামরিক বাহিনী অনেক ভালো। নতুন নাৎসিরা কিয়েভে শিকড় গেড়েছে। তারা সাধারণ নাগরিকদের জিম্মি করে রেখেছে।
এর আগে ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের নির্দেশ দেওয়ার পর রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পরিষ্কার করে দিয়েছেন, প্রতিবেশী দেশটিতে তিনি আরও নিয়ন্ত্রণ চাচ্ছেন। পাশাপাশি পশ্চিমা দেশগুলো ও ন্যাটোরও মুখোমুখি দাঁড়াতে চেয়েছেন। বিশ্লেষকদের ধারণা, এই অভিযানের মাধ্যমে কিয়েভের পশ্চিমাপন্থীদের ক্ষমতাচ্যুত করে সেখানে রুশপন্থী সরকারকে স্থলাভিষিক্ত করতে চাচ্ছেন পুতিন।
প্রাথমিকভাবে পুতিন দাবি করেছিলেন, স্বঘোষিত প্রজাতন্ত্র দোনেসৎসক ও লুহানস্কসহ ইউক্রেনের রুশভাষীদের রক্ষায় তার এই অভিযান। ২০১৪ সালে অঞ্চল দুটি ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। সেখানে বিদ্রোহীরা স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবিতে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে গত আটবছর ধরে লড়াই করছে।
নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অরগানাইজেশনে (ন্যাটো) যোগ দিতে এর আগে ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল ইউক্রেন। ২৮ ইউরোপীয় ও দুই উত্তর আমেরিকার দেশ মিলে এই জোট গঠিত হয়েছে।
পশ্চিমা সামরিক জোটে ইউক্রেনের যোগ দেওয়াকে শত্রুতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন পুতিন। গেল ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোকে নিজের একটি নিরাপত্তা তালিকা দিয়েছিল রাশিয়া। এর মধ্যে একটি চাওয়া ছিল, ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দিতে পারবে না। ইতিমধ্যে পূর্ব ও মধ্য ইউরোপে সামরিক পায়ের ছাপ ফেলেছে ন্যাটো।
তবে রাশিয়ার এসব দাবি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে দিয়েছে ন্যাটো। এদিকে রাশিয়ার বাইরে ইউক্রেনের অস্তিত্ব অস্বীকার করছেন পুতিন। তার মতে, দুদেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যগতভাবে ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে।
এক লেখায় পুতিন বলেন, বলশেভিকস ও ভ্লাদিমির লেনিন ইউক্রেনকে তৈরি করেছেন। এই দাবি করার সব যুক্তি আমাদের আছে। তার মতে, আধুনিক ইউক্রেন পুরোপুরি রাশিয়ার তৈরি।
ইউক্রেনের ন্যাটোতে যুক্ত হওয়ার স্বপ্নকে সরাসরি রাশিয়ার জন্য হুমকি হিসেবে দেখছেন পুতিন। এর আগে ইউক্রেনের টিকে থাকার অধিকারও তিনি অস্বীকার করেছিলেন। তার মতে, ইউক্রেন ও রাশিয়া অবিচ্ছেদ্য।