ইসলামি ভাবধারার কবিতা লিখে ভারতবর্ষের মুসলিম সমাজকে জাগিয়ে তোলা মহাকবি কায়কোবাদের জন্মদিন আজ। রাজধানী ঢাকার নিকটবর্তী নবাবগঞ্জ উপজেলায় আগলা পূর্বপাড়া গ্রামে ১৮৫৭ সালের ২৫ ফেব্রয়ারি জন্ম নেন বাংলা সাহিত্যের এই মহাকবি।
মহাকবি কায়কোবাদ বা মুন্সী কায়কোবাদের প্রকৃত নাম ছিল মোহাম্মদ কাজেম আল কোরেশী। কায়কোবাদ তার সাহিত্যিক ছদ্মনাম।
কবির বাবা ছিলেন শাহমত উল্লাহ আল কোরেশী ওরফে এমদাদ আলী এবং মা জোমরাত উন্নেসা ওরফে জরিফুন্নেসা খাতুন। কবির পিতৃপুরুষরা বাদশাহ শাহজাহানের রাজত্বকালে বাগদাদের কোনো এক অঞ্চল থেকে ভারতে আসেন। তাদের মধ্যে মাহবুব উল্লাহ আল কোরেশী ফরিদপুর জেলার গোড়াইলে বসবাস শুরু করেন।
কায়কোবাদ মাহবুব উল্লাহ আল কোরশীর প্রপৌত্র। কবির পিতামহের নাম নেয়ামত উল্লাহ আল কোরেশী। কবির বাবা ঢাকায় ওকালতি করতেন। কবির বয়স যখন এগারো তখন তার মা এবং বারো বছর বয়সে বাবা মারা যান। পড়াশোনায় তেমন একটা এগোতে পারেননি কবি। তিনি ঢাকা পগোজ স্কুলে ও আলিয়া মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন এবং এনট্রান্স পরীক্ষার আগেই তার পড়াশোনার সমাপ্তি ঘটে।
পরীক্ষার আগেই পোস্ট-মাস্টারের চাকরি নিয়ে তিনি নিজ গ্রাম আগলায় চলে যান। সমগ্র চাকরি জীবনে তিনি এ পদেই বহাল ছিলেন এবং এখান থেকেই অবসর গ্রহণ করেন।
কবি কায়কোবাদ ছিলেন ইসলামি ভাবধারার, আধুনিক বাংলা সাহিত্যের মুসলিম কবি। আবার ধর্ম, বর্ণ-নিরপেক্ষ বাংলাদেশের একজন সাম্যবাদী অসাম্প্রদায়িক চেতনার জাতীয় কবিরূপে তাকে বিভিন্নজন দেখে থাকেন। তিনি অনেক গানও লিখেছেন। তার শ্রেষ্ঠ গীতিকাব্য ‘অশ্রুমালা’ এ বিষয়টিই প্রমাণ করে।
কবি কায়কোবাদ ১৯০৪ সালে তার অমর কাব্যগ্রন্থ ‘মহাশ্মশান’ লিখে মহাকবি উপাধিতে ভূষিত হন এবং মহাকবি হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। ১৯৫১ সালের ২১ জুলাই ঢাকায় এই মহাকবির জীবনাবসান ঘটে।
তার লেখা ‘অশ্রুমালা’, ‘কুসুমকানন’, ‘শিব’ ‘মন্দির’ ’অমিয় ধারা’ ‘মহাশ্মশান’ ‘মহরম শরীফ’, ‘মহাশ্মশান’ বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ হিসেবে বাঙালি সাহিত্যপ্রেমীদের কাছে অমর হয়ে আছে।
কবির জন্মদিন উপলক্ষ্যে তার স্মরণে নবাবগঞ্জের দোহারে নেই তেমন কোনো উদ্যোগ-আয়োজন। তার স্মৃতিবিজড়িত বসতবাড়িটি রক্ষায়ও নেওয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা।
স্থানীয়রা বিভিন্ন সময় উদ্যোগ নিলেও বিত্তবানদের সাড়া না পাওয়ায় সেসব উদ্যোগ ভেস্তে যায়। কবি কায়কোবাদকে নিয়ে কিছু সংগঠন থাকলেও চোখে পড়ার মতো কার্যক্রম নেই বললেই চলে। নবাবগঞ্জের বাসিন্দা, ইউরোপ প্রবাসী বিষ্ণুপদ সাহা নামে এক ব্যক্তি কবির জন্মদিনে মসজিদে মিলাদ ও মন্দিরে প্রার্থনা সভার আয়োজন করেছেন।