যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে চলছে বাঘবন্দি খেলা। যার সবশেষ শিকারে পরিণত হলো ইউক্রেন। পুতিন যেমন খোলাখুলি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্ররা তার প্রধান টার্গেট, তেমনি যুক্তরাষ্ট্রও রাকঢাক না করেই বলেছে, রাশিয়াকে আর্থিকভাবে পঙ্গু করাই তাদের উদ্দেশ্য।
ইউক্রেন যখন ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে রাশিয়ার গোলায়, ঠিক তখনই বিভিন্ন অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞার নামে রাশিয়ার ওপর একের পর এক অর্থনৈতিক গোলা ছুড়ছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা।
সামনাসামনি লড়াই পরিহার করে চললেও অর্থনৈতিকভাবে মস্কোকে আঘাত করার কোনো সুযোগই হাতছাড়া করছে না যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা।
ইউক্রেনকে একাকী রুশ ভালুকের থাবায় ঠেলে দিলেও মস্কোনিয়ন্ত্রিত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর পশ্চিমারা আরোপ করেছে ভয়াবহ নিষেধাজ্ঞা।
ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে প্রলুব্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্র?
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর অপেক্ষাতেই যেন ছিল যুক্তরাষ্ট্র। ইউক্রেনে রাশিয়ার সেনা অভিযান শুরু হতে-না-হতেই একের পর এক রুশ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সম্পদ জব্দ করতে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা।
ইউক্রেনকে বলির পাঁঠা বানিয়ে রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিকভাবে ঝাঁপিয়ে পড়াই ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও তার জোটের প্রধান উদ্দেশ্য।
সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের আর্থিক নিষেধাজ্ঞায় রাশিয়ার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ছাড়িয়ে যাবে এক ট্রিলিয়ন ডলার বা এক লাখ কোটি ডলারেরও বেশি।
বিষয়টিতে রাখঢাক করেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও। তিনি খোলাখুলিই বলেছেন, রাশিয়াকে আর্থিকভাবে পঙ্গু করে দেওয়াই তাদের উদ্দেশ্য।
তিনি বলেন, পুতিন আগ্রাসনকারী। তিনি যুদ্ধ বেছে নিয়েছেন। তিনি এবং তার দেশ এর পরিণাম ভোগ করবে।
দীর্ঘস্থায়ী হতে যাচ্ছে অর্থনৈতিক যুদ্ধ
রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেন টিকতে না পারলেও মস্কোর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের অর্থনৈতিক লড়াই হতে যাচ্ছে দীর্ঘস্থায়ী। ইউক্রেনের কাদামাটিতে রাশিয়াকে আটকে ফেলে ধীরে ধীরে তাদের অর্থনৈতিকভাবে নিঃশেষ করে দেওয়াই যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য, যা বোঝা যায় জো বাইডেনের বক্তব্যেও। তিনি বলেন, তাদের অবরোধের মূল উদ্দেশ্য, রাশিয়ার বিরুদ্ধে নেওয়া অর্থনৈতিক আঘাতের মাত্রাকে সর্বোচ্চ করা।
বাইডেন আরও বলেন, ‘আমরা ডলার, ইউরো, পাউন্ড এবং ইয়েনে রাশিয়ার ব্যবসা করার সক্ষমতা ছেঁটে ফেলব।’
রাশিয়ার বিরুদ্ধে নেওয়া তার পদক্ষেপ শুধু দেশটির অর্থনীতিকে তাৎক্ষণিকভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে না; বরং ভবিষ্যতেও এর প্রভাব পরিলক্ষিত হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
‘হয় পুতিনকে সরিয়ে দাও, নয়তো পরিণাম ভোগ করো’
রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপ করে দেশটির জনগণকেও একটি বার্তা দিতে চান জো বাইডেন, তা হলো পুতিনকে সমর্থন করলে তার পরিণাম ভুগতে হবে তাদেরও।
রাশিয়ার জনগণের কাছে পুতিনকে অজনপ্রিয় করাও এসব অবরোধের অন্যতম উদ্দেশ্য। যেন রাশিয়ার জনগণই পুতিনের বিকল্প কাউকে বেছে নেন, যিনি হবেন পশ্চিমাদের কাছেও গ্রহণযোগ্য।
এ ব্যাপারে তাড়াহুড়ো নেই বাইডেনের, যা বোঝা যায় তার বক্তব্যেও। বাইডেন বলেন, এসব অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞার প্রভাব লক্ষণীয় হতে সময় লাগবে। আমরা পুতিনকে বোঝাতে চাই তার সামনে কী আসছে। এ ছাড়া রাশিয়ার জনগণকেও বোঝাতে চাই, পুতিন তাদের জন্য কোনো আপদ ডেকে নিয়ে এসেছে। এই অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য এটাই। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সঙ্গে শত্রুতার মূল্য রাশিয়াকে অর্থনীতি এবং কৌশলগতভাবে দিতে হবে।
বার্তা দেওয়া হচ্ছে পুতিনঘনিষ্ঠদেরও
রাশিয়ার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের টার্গেটে রয়েছে রাশিয়ায় পুতিনঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও। ইতোমধ্যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে পুতিনঘনিষ্ঠ রাশিয়ার দশ ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ওপর, যাদের মধ্যে কয়েকজন রাশিয়ার শীর্ষ ধনী হিসেবে পরিচিত।
তাদের মধ্যে রয়েছেন ব্যাংক রোসিয়ার অন্যতম প্রধান শেয়ারহোল্ডার গেনাডি টিমচেঙ্কো, এসএমপি ব্যাংকের সিংহভাগ শেয়ারের মালিক বরিস রোটেনবার্গ এবং রাশিয়ার ন্যাশনাল টেলিমেট্রিক সিস্টেমের (এনটিএস) বোর্ড অব ডিরেক্টরের চেয়ারম্যান ইগর রোটেনবার্গ।
নিষেধাজ্ঞায় থাকা এই ব্যক্তিদের যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলোতে থাকা সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের বাণিজ্যিক কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না পশ্চিমা দেশগুলোর কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান।
এসব নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য পুতিনের আশপাশে থাকা ব্যক্তিদের এই বার্তা দেওয়া, পুতিনের সঙ্গ না ছাড়লে মূল্য দিতে হবে তাদেরও।