এটা কোনো পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ছিল না, নেশার ঘোরে ধাক্কাধাক্কিতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেই দিন পায়রা নদীতে ভেসে যায় আরিফুর রহমান ওরফে অপি (২২)। দুর্ঘটনার দুই মাসের মাথায় পটুয়াখালী র্যাবের হাতে আটক হওয়া নিহত অপির সহপাঠী মো. সোলায়মান ওরফে লিমন (২২) র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার বিবরণ দিয়ে তার সংশ্লিষ্টতা স্বীকার করেছেন।
রোববার দুপুরে র্যাব-৮ পটুয়াখালী ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মো. শহিদুল ইসলাম প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য নিশ্চিত করেন।
এর আগে শনিবার হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার শাজাহানপুর ইউনিয়নের গজপুর গ্রামে আত্মগোপনে থাকাবস্থায় র্যাবের হাতে আটক হয় লিমন। ওই ঘটনায় জড়িত অপর সহপাঠী মো. সাব্বির এখনো পলাতক রয়েছেন।
নিহত আরিফুর রহমান অপি মির্জাগঞ্জ উপজেলার চরখালী এলাকার আলতাফ হোসেনের ছেলে ছিল। তিনি বরিশাল সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ইতিহাস বিভাগের ছাত্র ছিলেন।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, নিহত কলেজছাত্র অপি ও তার দুই সহপাঠী লিমন ও সাব্বির ডেনড্রাইট গামের নেশায় আসক্ত ছিলেন। ঘটনার দিন ২০২১ সালের ২৮ ডিসেম্বর তিন বন্ধু মিলে পায়রা নদী সংলগ্ন বেড়িবাঁধের বাইরে লোকালয়ে অবস্থান করে ডেনড্রাইট গামের নেশা করেন। একপর্যায়ে তারা স্বাভাবিক অনুভূতি হারিয়ে ধাক্কাধাক্কি শুরু করেন। এতে আরিফুর রহমান অপি পা পিছলে পায়রা নদীতে পড়ে যায়। ওই সময়ে নদীর স্রোতের গতি প্রখর থাকায় অনেক চেষ্টার পরও অপিকে তারা নদী থেকে তুলতে পারেনি বলে র্যাবকে জানান।
কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে ঘটনা ধামাচাপা দিয়ে আত্মগোপনে চলে যায় সোলেমান ওরফে লিমন ও সাব্বির। এই এলাকায় তাদের বাড়ি।
নিহতের পরিবার সূত্র জানায়, ঘটনার দিন চরখালী বাজারে যাবার কথা বলে ঘর থেকে বের হয় অপি। ওই দিন বাড়ি না ফিরলে সংশ্লিষ্ট থানায় জিডি করে অপির পরিবার। অপি নিখোঁজের ৫ দিনের মাথায় ২ জানুয়ারি চরখালী নদীর অপরপ্রান্ত পটুয়াখালী সদর উপজেলার ছোট বিঘাই গ্রামসংলগ্ন পায়রা নদীর চর থেকে অপির অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে সদর থানা পুলিশ।
লাশ শনাক্তের পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ ঘটনায় অপির পিতা সংশ্লিষ্ট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন; যা নিয়ে গণমাধ্যমে আলোড়ন সৃষ্টি হলে অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনতে চাপ প্রয়োগ করে র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৬ ফেব্রুয়ারি হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার শাজাহানপুর ইউনিয়নের গজপুর গ্রামে আত্মগোপনে থাকাবস্থায় তাকে পাওয়া যায়। এতদিন লিমন শ্রমিকের কাজে নিয়োজিত ছিলেন। লিমন স্থানীয় সুবিদখালী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী বলে র্যাব জানান।