সিলেটের বিশ্বনাথের টুকেরকান্দি গ্রামের জঙ্গল থেকে এটি উদ্ধার করা সেই গন্ধগোকুলটিকে অবমুক্ত করা হয়েছে। দীর্ঘ ১৬ দিন চিকিৎসা শেষে সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৫টার দিকে সিলেট বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রে প্রাণীটিকে অবমুক্ত করা হয়।
এর আগে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি টুকেরকান্দি গ্রামের এক বসতবাড়ির পার্শ্ববর্তী একটি জঙ্গল থেকে প্রাণীটিকে উদ্ধার করা হয়েছিল।
পরে প্রাণীটিকে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাধিকারের সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
অবমুক্তকালে প্রাধিকারের সভাপতি তাজুল ইসলাম মামুন, সহসভাপতি মো. আকিব, সাধারণ সম্পাদক নীলোৎপল দে, আল ইবনে রিফাত ও রেসকিউ সদস্য তুষার কান্তি উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ বন অধিদফতরের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা জোহরা মিলা জানান, নিশাচর এই প্রাণীটি লোকালয়ের কাছাকাছি ঝোপ-জঙ্গলে বাস করে। এরা তাল-খেজুর রস, ফল, সবজি ছাড়াও কৃষির জন্য ক্ষতিকর পোকামাড়র ও ইঁদুর খেয়ে কৃষকের উপকার করে। মজার বিষয় হলো, বট বা অন্যান্য গাছের ফল খাওয়ায় এদের মলের সঙ্গে নির্গত বীজগুলোর শতভাগ অঙ্কুরোদগম হয়, যা উদ্ভকূল রক্ষায় দারুণ কার্যকরী।
জোহরা মিলা বলেন, আপনি বনজঙ্গল বা ঝোপ-ঝাড়ের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় যদি পোলাওয়ের চালের মতো গন্ধ পান তবে বুঝে নেবেন আপনার আশেপাশেই গন্ধগোকুল আছে।
গন্ধগোকুলটিকে বাঁচাতে প্রাধিকারের কর্মীদের প্রচেষ্টার প্রশংসা করে তিনি আরও বলেন, বনজঙ্গল ধ্বংস, খাদ্যের অভাব, পিটিয়ে হত্যা ইত্যাদি কারণে প্রকৃতির উপকারী এই প্রাণীটির অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। বিভিন্ন লোকজ ওষুধ ও টোটকা তৈরিতে গন্ধগোকুল হত্যা করা হয়। কিন্তু এসব ওষুধের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। বরং কিছু অসাধু ব্যক্তি দেশের সরল মানুষকে ঠকাচ্ছে। এক সময় দেশে প্রচুর গন্ধগোকুলের দেখা মিললেও বর্তমান পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়েছে যে, আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) বিবেচনায় এটি পৃথিবীর বিপন্ন প্রাণীর তালিকায় উঠে এসেছে। বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-১ অনুযায়ী এ প্রাণীটি সংরক্ষিত। তাই এটি হত্যা বা কোনো ক্ষতি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।