আফগানিস্তানকে প্রথমবারের মতো হোয়াইওয়াশ করার মিশনে নেমে শুরুটা ভালো হলো না বাংলাদেশের। টস জিতে ব্যাট করতে নেমে আফগান স্পিনারদের তোপে ২৫ বল বাকি থাকতেই মাত্র ১৯২ রানেই শেষ তামিমদের ইনিংস।
আগের দুই ম্যাচে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি আফগান স্পিনত্রয়ী রশিদ-নবী-মুজিব। তবে হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর ম্যাচে ঠিকই জ্বলে উঠলেন তারা। রশিদের তিন উইকেটের পাশাপাশি নবী নিলেন দুই উইকেট। এছাড়া রান আউট হয়েছে তিনটি।
বাংলাদেশের ব্যাটিং ব্যর্থতার দিনে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তবে একপাশ আগলে রাখতে পারলেও ফিনিশারের ভূমিকায় ছিলেন না ‘মিস্টার ফিনিশার’। ৫৩ বল খেলে টেস্ট মেজাজে করেছেন ২৯ রান। যার ভেতর বাউন্ডারির মার নেই একটিও। তিনি কিছুটা চালিয়ে খেলতে পারলেও হয়তো দলীয় স্কোরটা দুইশ ছাড়াতো।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে পাওয়ারপ্লেতে দারুণ খেলছিলেন দুই ওপেনার তামিম ও লিটন। কিন্তু পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার পরের ওভারেই সাজঘরে ফিরে গেলেন তামিম। ফজলহক ফারুকির বলে স্টাম্প উপড়ে যায় দেশসেরা ওপেনারের। এ নিয়ে সিরিজের তিন ম্যাচের সবকটিতেই তামিমের উইকেট তুলে নিলেন তরুণ পেসার ফজলহক।
তামিমের আউটের পর লিটনের সঙ্গে জুটি গড়ে দলকে শতরানের গোড়ায় নিয়ে গিয়েছিলেন সাকিব। কিন্তু আজমতউল্লাহর বল রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলেছিলেন সাকিব, বল ব্যাটেও লেগেছিল। কিন্তু এরপর সাকিবের পেছনেই এল, মাটিতে একবার পড়ে আঘাত হানে স্টাম্পে।
ওয়ানডে সিরিজে তিন ম্যাচে টাইগার এ অলরাউন্ডারের ব্যাট থেকে এসেছে ৬০ রান। তবে আগের দুই ম্যাচের তুলনায় আজ তুলনামূলক কিছুটা ভালো ছিলেন। প্রথম ম্যাচে ১০ রানের পর দ্বিতীয় ম্যাচে করেছিলেন ২০। আর আজ করলেন ৩০। তবে প্রতি ম্যাচেই বাজেভাবে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এসেছেন।
সাকিবের পর ক্রিজে নেমে বেশিক্ষণ থিতু হতে পারেননি মিস্টার ডিফেন্ডেবল মুশফিকুর রহিমও। আগের ম্যাচে তৃতীয় উইকেটে লিটন দাসের সঙ্গে ২০২ রানের সর্বোচ্চ জুটির রেকর্ড গড়েছিলেন মুশফিক। কিন্তু আজ পারলেন না তেমন কিছু। রশিদ খানের ঘূর্ণিতে উইকেটকিপার গুরবাজের হাতে ক্যাচ দিয়ে ১৫ বলে মাত্র ৭ রান করেই ফিরে গেছেন। আগের ম্যাচেই খেলেছিলেন ৮৩ রানের ঝকঝকে এক ইনিংস।
আরেক হতাশার নাম ইয়াসির আলি রাব্বী। চলতি ওয়ানডে সিরিজে অভিষেক হয় তার। তাও নিজের ঘরের মাঠে। তবুও কি দুঃস্বপ্নই হয়ে থাকল তার অভিষেকটা। প্রথম ম্যাচে শূন্য রানে আউট হওয়ার পর দ্বিতীয় ম্যাচে ব্যাটিংয়েরই সুযোগ পাননি। আজ আবারও নিজের সামর্থ্য প্রমাণের সুযোগ এসেছিল। কিন্তু চাপটা সামলাতে পারলেন কই! আবারও সেই ব্যর্থতার বৃত্তে চট্টগ্রামের এ ক্রিকেটার। চার বলে মাত্র ১ রান করে রশিদের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফিরে গেছেন।
চট্টগ্রামের সাগরিকাপাড়ের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে লিটন লিটন রব। টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরির পথেই ছিলেন বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে অন্যতম ভরসা বাঁহাতি এই ব্যাটার। কিন্তু সবশেষ ম্যাচে পারলেও আজ পারলেন না। গ্যালারি স্তব্দ করে দিয়ে ১১৩ বলে ৮৬ রান করে মোহাম্মদ নবীর বলে গুলবাদিন নাঈবের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেছেন তিনি।
অবশ্য এর আগে পঞ্চাশতম ওয়ানডে ম্যাচ খেলতে নেমে তুলে নেন নিজের ক্যারিয়ারের পঞ্চম ফিফটি। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে চার হাজার রানের মাইলফলকও স্পর্শ করেন লিটন।
প্রথম ম্যাচে মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে জুটি বেঁধে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে গিয়েছিলেন আফিফ। তবে এরপর আর তাকে তেমনরূপে দেখা যাচ্ছে না। দ্বিতীয় ম্যাচে গড়পড়তা ব্যাটিং করলেও আজ তৃতীয় তথা সবশেষ ম্যাচে দলের বিপর্যয়ে হাল ধরতে পারলেন না তরুণ এ ক্রিকেটার। নবীর দ্বিতীয় শিকার হয়ে ৬ বলে মাত্র ৫ রান করে মুজিবের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেছেন।
পরপর উইকেট হারিয়ে বিপর্যস্ত বাংলাদেশ যখন জুটির খোঁজে ঠিক তখনই ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’ যেন মিরাজের রানআউট। মাহমুদউল্লাহ-মিরাজের পর আর স্বীকৃত ব্যাটসম্যান নেই বলে তাদের ওপর বাড়তি দায়িত্ব ছিল। রানরেট বাড়ানো এবং সেটি করতে হতো উইকেট ধরে রেখেই। এমন জুটিরই শেষটা হলো রানআউটে। ১২ বলে ৬ রান করে ফিরলেন মিরাজ।
মিরাজের রান আউটের পর তাসকিনকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে সাজঘরে ফেরালেন রশিদ খান। রিভিউ নিয়েছিলেন তাসকিন। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি।