ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনে সৃষ্ট সঙ্কটে পশ্চিমা বিশ্বের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মঙ্গলবার (২ মার্চ) রাতে ফোনালাপে দীর্ঘ আলোচনায় ইউক্রেনে বিদ্যমান মানবতার সঙ্কট নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানায়, মোদির সঙ্গে মত বিনিময় করেছেন ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রো এবং পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেই দুদে।
এসময় নরেন্দ্র মোদি বার বার তার উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং চলমান সঙ্কট নিরসনে অন্য নেতারাও তার সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন।
উল্লেখ্য, ওইদিন সকালেই ইউক্রেনে অধ্যয়নরত নবীন এস জি নামে ২১ বছর বয়সী ভারতীয় এক ছাত্র রাশিয়ান সৈন্যদের বোমা হামলায় মারা গেছেন। এরপরই সেখানে বসবাসকারী ভারতীয় নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তার বিষয়টি অনেক বেশি উদ্বেগের হয়ে দাঁড়িয়েছে ভারত সরকারের জন্য। ইতিমধ্যে উদ্ধার অভিযানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে দেশটির পক্ষ থেকে। ফোনালাপে মোদি এ ব্যাপারে পশ্চিমা বিশ্বেরও যথাসম্ভব সাহায্য কামনা করেছেন।
এসময় ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল মোদির প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন এবং দ্রুতই ইউক্রেনে বিদ্যমান মানবিক সংকট নিরসনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দেন। মোদিও বৈশ্বিক শান্তি বজায় রাখার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইন, ইউরোপীয় সনদ, সকল রাষ্ট্রের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার অধিকারের ব্যাপারে ভারতের বিশ্বাস পরিষ্কার করেন। পরে চার্লস তার ব্যক্তিগত টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে ভারতের প্রতি তার সমবেদনা ও একাত্মতা প্রকাশ করে টুইট করেন।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রোর সঙ্গে মত বিনিময়কালে উভয়েই ইউক্রেনে সৃষ্ট মানবিক বিপর্যয়ের ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এসময় মোদি সেখানে অবস্থিত নাগরিকদের উদ্ধারে এবং যুদ্ধ পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় ত্রাণ, খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহে ভারত সরকারের সর্বাত্মক তৎপরতা সম্পর্কে জানান।
এছাড়াও ইউক্রেন থেকে সাধারণ নাগরিকদের সরিয়ে নিতে এবং চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ভারতীয় নাগরিকদের জন্য ভিসা শিথিল করে দেওয়ার জন্য পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেই দুদেকে ফোন করে বিশেষ ধন্যবাদ জানান ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। দু’পক্ষের মধ্যে এসময় বেশ আন্তরিক আলাপচারিতা হয়। আলাপকালে পোলিশ প্রেসিডেন্টকে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা মনে করিয়ে দেন মোদি। এসময় তার কথায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে বেশ কিছু পোলিশ পরিবার ও অনাথ শিশুকে উদ্ধারে তৎকালীন ভারতের জামনগর মহারাজার সাহায্যের কথা উঠে আসে। একইসাথে ২০০১ সালে গুজরাটের ভূমিকম্পে পোল্যান্ড সরকার যে মূল্যবান সহায়তা পাঠায়, তা স্মরণ করতেও ভোলেন না তিনি।
আলোচনাকালে তিন পশ্চিমা নেতার প্রতিই মোদি ইউক্রেন-রাশিয়া দ্বন্দ্বে সৃষ্ট মানবিক সঙ্কট ও বৈশ্বিক ভারসাম্য নিয়ে বার বার উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং দ্বন্দ্ব দ্রুত নিরসনে গঠনমূলক কূটনৈতিক তৎপরতার আহবান জানান।