ইউক্রেনের বন্দর শহর মারিউপলে লাগাতার বোমাবর্ষণ অব্যাহত রয়েছে রাশিয়ার। এ পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষকে উদ্ধারও করতে দেওয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংগঠন রেডক্রস।
রেডক্রস জানিয়েছে, মারিউপল থেকে দুইবার সাধারণ মানুষকে উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়েছে তারা। কিন্তু দুইবারই ব্যর্থ হয়েছে। রাশিয়ার সেনা সাধারণ মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য কোনো সেফ প্যাসেজ দিচ্ছে না। তারা লাগাতার বোমাবর্ষণ করছে সঙ্গে ছোঁড়া হচ্ছে গোলা। এই পরিস্থিতিতে বহু মানুষ সেখানে কার্যত বন্দি হয়ে আছেন। যে কোনো সময় তারা আহত বা নিহত হতে পারেন। বস্তুত শনিবার থেকে ওই অঞ্চল থেকে সাধারণ মানুষকে উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে আসছে রেডক্রস।
এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি রোববার এক ভিডিও বার্তায় জানিয়েছেন, বন্দর শহর ওডেসা সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে রাশিয়া। একের পর এক বোমাবর্ষণ শুরু হয়েছে সেখানেও। এদিন রাশিয়ার বিরুদ্ধে ফের একগুচ্ছ অভিযোগ করেছেন জেলেনস্কি। তার বক্তব্য, রাশিয়ার বিরুদ্ধে গোটা বিশ্ব যে একাধিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, তা যথেষ্ট নয়। তারপরেও রাশিয়ার আগ্রাসন এতটুকু কমেনি। কিয়েভের অদূরে ইউক্রেনের একটি সেনাঘাঁটিতে রাশিয়া আক্রমণ চালানোর ঘোষণা দেওয়ার পরে বিবৃতিটি প্রকাশ করেন জেলেনস্কি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনকে আরও অতিরিক্ত ৩৫০ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র দেওয়ার নির্দেশ দেন৷ এর মধ্যে জ্যাভলিন (ছবি) এবং স্টিঙ্গারও রয়েছে৷ এছাড়া সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের জন্য বর্ম, ছোট অস্ত্র, অ্যান্টি-আর্মার থাকার কথা জানিয়েছে পেন্টাগন৷ ইতিমধ্যে জার্মানিতে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রের সংগ্রহশালা থেকে সেগুলো পোল্যান্ড হয়ে ইউক্রেনে পাঠানো হচ্ছে৷
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, রাশিয়া যতই আক্রমণ চালাক, ইউক্রেনও তার জবাব দিচ্ছে। ইউক্রেনের সাধারণ মানুষের পাশাপাশি ৫২টি দেশের ২০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক ইউক্রেনে এসে লড়াই করছেন। ইউক্রেনের মানুষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তারা লড়ছেন। এটা প্রমাণ হয়ে গেছে যে, শুধু কথায় নয়, গোটা বিশ্ব কাজেও ইউক্রেনের পাশে আছে।
এরই মধ্যে রাশিয়া দাবি করেছে, ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় সেনাঘাঁটি তারা ধ্বংস করে দিয়েছে। সেনাঘাঁটিটি আক্রমণের আগে মস্কো সেখান থেকে সকলকে চলে যেতে বলেছিল। তবে ইউক্রেন এখনো সেনাঘাঁটি ধ্বংস নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, এখনো পর্যন্ত ১৫ লাখ মানুষ ইউক্রেন ছেড়ে আশপাশের দেশে শরণার্থী হয়ে পৌঁছেছেন। যতদিন যাচ্ছে, সংখ্যাটি লাফিয়ে বাড়ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ।
এদিকে লড়াইয়ের জের এসে পড়েছে বাজারেও। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম প্রতিদিন বাড়ছে। রোববার ব্যারেল প্রতি তেলের দাম ছিল ১৩৯ ডলার। ২০০৮ সালের পর তেলের দাম এতটা বাড়েনি কখনও। ২০০৮ সালে সর্বোচ্চ তেলের দাম উঠেছিল ১৪৭ ডলার ৫০ সেন্ট। এবার যেভাবে তেলের দাম উঠছে, তাতে সেই রেকর্ডও ভেঙে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও বেশ কয়েকটি সংস্থা নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে। কেপিএমজি এবং পিডাব্লিউসি রাশিয়া থেকে অফিস তুলে নেওয়ার কথা জানিয়েছে। কেপিএমজি বেলারুশেও তাদের সংস্থা বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলেছে। এর আগে ভিসা এবং মাস্টারকার্ডও রাশিয়ায় তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছে।