দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে সারাদেশে এখন নীরব দুর্ভিক্ষ চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে জাতীয়তাবাদী যুবদলের এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি একথা জানান।
দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম জনগণের ক্রয়ক্ষমতার নাগালে রাখার দাবিতে এই বিক্ষোভ সমাবেশ আয়োজন করে যুবদল।
সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, জিনিসপত্রের দাম এত বেড়েছে যে বেঁচে থাকাই কষ্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, সারাদেশে আজকে একটা প্রকৃত নীরব দুর্ভিক্ষ চলছে। মানুষ বলতে পারে না। তারা মুখোশ পড়ে টিসিবির ন্যায্যমূল্যের ট্রাকের পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়। লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়। ধাক্কাধাক্কি করে কোনো রকমে এক লিটার তেল, কিছু চাল-ডাল আর আলুর জন্য।
নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীর এক বক্তব্যের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, তিনি যেদিন দাম কমাতে হুশিয়ারি দিলেন, সেদিনই পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজি ১০ টাকা বেড়ে গেলো। এর অর্থ এ সরকারের বাজারের ওপরে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।
বাজারের সব সিন্ডিকেটের হোতা আওয়ামী লীগের নেতারা এমন দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সারাদেশে যত চাঁদাবাজি, ঘুষ খাওয়া সবকিছুর মূল হচ্ছে এ আওয়ামী লীগ। এ আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই তারা জনগণের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাওয়ার চেষ্টা করেছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আরব আমিরাত যাওয়ার আগে কিছু বক্তব্য রেখেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, করোনার পরে এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সব জায়গায় জিনিসপত্রে দাম বেড়েছে। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করতে চাই, রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ কবে থেকে শুরু হলো?
আর কবে থেকে এদেশের মানুষ চিৎকার করছে যে, তেলের দাম কমাও, চালের দাম কমাও, ডালের দাম কমাও, আমরা আর পারছি না। গত দুই বছর ধরে করোনার সময় যে চুরি, যে ডাকাতি আপনারা করেছেন স্বাস্থ্যখাতে। করোনাকে কেন্দ্র করে প্রণোদনার নামে বড় লোকদের সরকারি টাকা দিয়েছেন, গরিবকে আরও গরিব করেছেন, সে কথার জবাব কে দেবে প্রধানমন্ত্রী।
দুর্ভিক্ষ ঠেকাতে আওয়ামী সরকারকে হঠানোর বিকল্প নেই উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, আজকে আমাদের দুর্ভাগ্য এদেশের মানুষ অনেক সহ্য করতে শিখে গেছে। কলকাতায় ট্রামের ভাড়া ৪ পয়সা বাড়লে কলকাতা বন্ধ হয়ে যায়। জিনিসপত্রের দাম বাড়লে কলকাতা বন্ধ হয়ে।
আর এরা ১৪ বছর ধরে মানুষের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন করছে কিন্তু আমরা এখনও সেভাবে বন্ধ করতে পারছি না। আমাদের বন্ধ করতে হবে। এরা যে অন্যায়, নির্যাতন-নিপীড়ন করছে তাকে বন্ধ করতে হলে, মানুষকে বাঁচাতে হলে, দুর্ভিক্ষ যেন না হয় তার ব্যবস্থা করতে হলে এ সরকারকে হঠানো ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।
সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনাদের দিন শেষ হয়ে এসেছে সুতরাং ভালোয় ভালোয় পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করুন।
জাতীয়তাদাবী যুব দলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরবের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দীন টুকুর পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক ডাকসুর সাবেক ভিপি আমান উল্লাহ আমানসহ বিএনপির ও অঙ্গসংগঠনের অন্যান্য নেতারা।