বরগুনার বেতাগীতে ২৭ নম্বর মধ্য করুণা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রধান শিক্ষকের অনিয়মে বাঁধা দেয়ায় ওই বিদ্যালয়ের সভাপতিকে অপমানও করেন প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন।
এ ঘটনায় আজ রবিবার (১৩ মার্চ) ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও কাজিরহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সেলিম আহমেদ স্বেচ্ছায় সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি নেন।
জানা যায়, মাইনর মেরামত প্রকল্পে কোন প্রজেক্ট কমিটি ছাড়াই বিল উত্তোলন, রেজুলেশন বিহীন ভাউচার তৈরী করে অর্থ আত্মসাৎ, বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থেকে বেতন উত্তোলন, শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সাথে অশোভনীয় আচরণ, জাতীয় প্রোগ্রাম উদযাপন না করা সহ নানা অনিয়মের অভিযোগ ওই প্রধান শিক্ষক জাকিরের বিরুদ্ধে।
২০২১-২২ অর্থবছরে ওই বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য মাইনর মেরামত প্রকল্পের আওতায় ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু সরেজমিনে গেলে দেখা যায় নিম্নমানের কাজ করে বিল নেয়া হয়েছে সম্পূর্ণ কাজের।
তবে সেই কাজের ভাউচার পর্যন্ত নেই ওই প্রধান শিক্ষকের কাছে। প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নের জন্য করা হয়নি কোন প্রজেক্ট কমিটি। এসব অনিয়মের কথা বলেন বিদ্যালয়ের সভাপতি সেলিম আহমেদ। প্রধান শিক্ষক যথাযথ কোন উত্তর দিতে পারেনি।
আজ রবিবার সেলিম আহমেদ বিদ্যালয়ের সভাপতির পথ থেকে অব্যাহতি চেয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বরাবরে আবেদনপত্র জমা দেন। বিদ্যালয়ে একাধিক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান,‘প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন কাউকে তোয়াক্কা না করেই এতদিন এসব অনিয়ম করে আসছেন।
কোন ব্যাপারে কোন সহায়তা চাইতে গেলে আমাদের সাথে অশোভন আচারণ করেন। মধ্যকরুণা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মানেজিং কমিটির সভাপতি মো. সেলিম আহমেদ জানান,‘বিদ্যালয়ে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেনের নানা অনিয়ম লক্ষ্য করেছি।
মাইনর মেরামতের প্রজেক্ট কমিটির কাগজ ও কাজের ভাউচার চাইলে সে কিছুই দিতে পারেনি, বরং আমার সাথেই বাজে আচরণ করেন এবং বিদ্যালয়ের যৌথ ব্যাংক একাউন্টের চেকে স্বাক্ষর দিতে বলেন।
যার ফলে আমি মনে করেছি এই সভাপতির দায়িত্বে থাকাটা আমার পক্ষে ঠিকনা, তাই আমি সভাপতির পদ থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিয়েছি। বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর অব্যাহতি পত্র দাখিল করেছি।
তিনি আরো জানান, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একটি জাতীয় প্রোগ্রামও করেননা কারন জানতে চাইলে তিনি বলেন এসব দরকার না। তার এমন নানা অনিয়ম যখন নিজে বন্ধ করতে ব্যর্থ হই, তখন স্বেচ্ছায় সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি নিয়েছি।
এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন বলেন,‘ সভাপতি আমার বড় ভাই তার সাথে একটু খারাপ আচরণ করেছি, মাফও চেয়েছি। আর ভাউচার করা হয়নি তবে খরচের খাত আমি লিখে রেখেছি।’ প্রজেক্ট কমিটির ব্যাপারে জানতে চাইলে উত্তরে বলেন এসব দরকার মনে করিনি।
সর্বশেষ ভাউচার দেখতে চাইলে বলেন, আমি সব কাগজ পত্র গুছিয়ে একসময় আপনাকে (সংবাদকর্মীকে) আসতে বললে আপনি দেখে যাবেন। বেতাগী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ পেয়েছি। এর মধ্যে একটি হলো জাতীয় অনুষ্ঠানগুলো উদযাপন করেননা।
ওই বিদ্যালয়ে জাতীয় অনুষ্ঠানগুলো উদযাপন হয়েছে কিনা সত্যতা যাচাইয়ের জন্য একটি ডকুমেন্টারি চেয়েছি। রবিবার অফিস চলাকালীন সময়ের মধ্যে জমা দিতে বলেছি, কিন্তু তিনি জমা দিতে পারেননি।
অতএব তদন্ত করে আইনগত ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।’ এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.সুহৃদ সালেহীন বলেন, ‘ওই প্রধান শিক্ষক সম্পর্কে আরো অভিযোগ শুনেছি। এ ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’